দেশের ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের ৩৮ শতাংশের রক্তে সীসার মাত্রা নিরাপদ সীমার চেয়ে বেশি। সীসা দূষণ শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে হুমকি সৃষ্টি করে। আক্রান্ত শিশুদের অর্ধেকের বেশি ধনী এবং ৩০ শতাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বলে তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও ইউনিসেফ।
তারা বলছে, অন্তঃসত্ত্বা নারীদের প্রায় ৮ শতাংশের রক্তে সীসার মাত্রা নিরাপদ সীমার চেয়ে বেশি। ঢাকা (৬৫ শতাংশ) সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এলাকা। আর ১০ কোটির বেশি মানুষ নিরাপদভাবে পরিচালিত পানির সুবিধা বঞ্চিত।
রোববার রাজধানীর আগারগাওস্থ বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জরিপের প্রাথমিক রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।
জরিপে অপুষ্টি বৃদ্ধির বিষয়টি স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে, কম ওজনের শিশুর হার ২০১৯ সালে যেখানে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ ছিল, তা বেড়ে ২০২৫ সালে ১২ দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছেছে। মায়েদের অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা এখনো অত্যন্ত উচ্চ হারে, ৫২ দশমিক ৮ শতাংশ রয়েছে। কিশোরী জন্মহার (প্রতি ১ হাজার মেয়ের মধ্যে) ৮৩ থেকে বেড়ে ৯২ হয়েছে। এই ফলাফলগুলো মাতৃ ও শিশু পুষ্টি, সঠিক স্তন্যপান এবং স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের জরুরি প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরছে।
বিবিএস জরিপ বলছে, শিশু সুরক্ষা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়। ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে শিশুশ্রমের হার এখন ৯ দশমিক ২ শতাংশ। যা ২০১৯ সালের ৬ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে আরো ১২ লাখ শিশু ঝুঁকিতে পড়েছে। সহিংসতাও ব্যাপক, সাম্প্রতিক সময়ে ৮৬ শতাংশ শিশু কোনো না কোনো ধরনের সহিংস আচরণের শিকার হয়েছে। বাল্যবিবাহের হার ২০১৯ সালের ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে কমে ৪৭ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে এখনো প্রায় অর্ধেক মেয়ের ১৮ বছর বয়সের আগেই বিয়ে হয়ে যায়। এছাড়া পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে মাত্র ৫৯ শতাংশের নিবন্ধিত হয়েছে এবং ৪৭ শতাংশের এর জন্ম সনদ আছে, যা অনেক শিশুকে আইনগত পরিচয় এবং সেবা প্রাপ্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে।
শিশু সুরক্ষায় বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য সুফল বয়ে আনে; প্রতি এক ডলার বিনিয়োগে নয়গুণ সামাজিক ও অর্থনৈতিক লাভ পাওয়া যায়। শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা, সামাজিক সেবা সম্প্রসারণ এবং কিশোর-কিশোরীদের ক্ষমতায়নের জন্য জরুরি বিনিয়োগের প্রয়োজন। যাতে সকল শিশু নিরাপদভাবে বেড়ে উঠতে পারে এবং তাদের সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশ ঘটে।
স্বাস্থ্য সূচকগুলো বিদ্যমান ঘাটতিগুলো নির্দেশ করে। নবজাতকের মৃত্যুহার এখনো প্রতি ১ হাজার জীবিত জন্মে ২২। যা পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বর্তমানে ৭৫ শতাংশে প্রসবের ক্ষেত্রে সিজারিয়ান সেকশনের হার বৃদ্ধি স্বাস্থ্যঝুঁকি ও অর্থনৈতিক চাপ-উভয়ই বাড়াচ্ছে। মাত্র ৪৬ শতাংশ নারী গর্ভধারণের প্রথম চার মাসের মধ্যে প্রসব-পূর্ব সেবা (অ্যান্টেনাল কেয়ার) গ্রহণ করেন, যা মাতৃ স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে।



