‘শিশু, কিশোর-কিশোরী ও নারী উন্নয়নে সচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম’ প্রকল্পের আওতায় জাতীয় পর্যায়ে সংবাদকর্মীদের নিয়ে টাইফয়েড টিকাদান বিষয়ক এক কনসালটেশন কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ সোমবার জাতিসঙ্ঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফের সমর্থনে জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের আয়োজনে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মুহম্মদ হিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ আলতাফ-উল-আলম।
কর্মশালার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মো: মারুফ নওয়াজ।
কর্মশালায় জানানো হয়, বাংলাদেশে সংক্রমণজনিত রোগের অন্যতম প্রধান কারণ টাইফয়েড জ্বর। এটি স্যালমোনেলা টাইফি নামক ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ছড়ায়, যা মূলত দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে।
টাইফয়েড প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত টিসিভি টিকা কার্যকর ও নিরাপদ।
সারাবিশ্বে শিশুদের এ টিকা দেয়া হচ্ছে এবং সামান্য জ্বর, ব্যথা বা অস্বস্তি ছাড়া কোনো জটিল প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
আসন্ন জাতীয় টিকাদান ক্যাম্পেইনে দেশের প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বহির্ভূত নয় মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের ইপিআই স্থায়ী ও অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে টিসিভি টিকা দেয়া হবে।
টিকা প্রদানের নিয়ম অনুযায়ী, দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের উরুর মধ্যভাগের বাইরের অংশের মাংসপেশিতে এবং দুই বছরের বেশি বয়সী শিশুদের বাহুর উপরিভাগে ইনজেকশনের মাধ্যমে ০.৫ এম.এল. টিকা দেয়া হবে।
কর্মশালায় জানানো হয়, বাংলাদেশে নয় মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়, তাই এ বয়সী শিশুদের এক ডোজ টিকা দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে।
ভবিষ্যতে নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচির আওতায় নয় মাস বয়সী শিশুদের এ টিকা দেয়া হবে।
কর্মশালায় আরো জানানো হয়, আগামী ১২ অক্টোবর থেকে টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু হবে। বেদে সম্প্রদায় থেকে শুরু করে কোনো অবহেলিত ও ভাসমান জনগোষ্ঠী এ ক্যাম্পেইনের বাইরে থাকবে না।
আয়োজকদের মতে, সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে টাইফয়েড প্রতিরোধে সঠিক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া এ কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য। তারা আশা করেন, টিকা সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে পড়লে শিশু-কিশোরদের মধ্যে টাইফয়েড সংক্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।
কর্মশালায় ড. মোহাম্মদ আলতাফ-উল-আলম বলেন, ‘জনস্বাস্থ্য রক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অনস্বীকার্য। বিশেষ করে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় টিসিভি টিকাদান কর্মসূচি একটি সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ। গণমাধ্যমের সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া এ গুরুত্বপূর্ণ বার্তা জনগণের সর্বস্তরে পৌঁছানো সম্ভব নয়। ইউনিসেফ বাংলাদেশ এই কার্যক্রমে যে কারিগরি ও কৌশলগত সহায়তা প্রদান করছে, তার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।’
জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব মুহম্মদ হিরুজ্জামান, এনডিসি বলেন, ‘বাংলাদেশ ইতোমধ্যে পোলিও, কলেরা ও অন্যান্য সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে যে সাফল্য অর্জন করেছে, তার পেছনে গণমাধ্যমের অগ্রণী ভূমিকা অনস্বীকার্য। আমি বিশ্বাস করি, টিসিভি টিকাদান কর্মসূচিও গণমাধ্যমের শক্তিশালী অংশগ্রহণ ও দায়িত্বশীল প্রচারণার মাধ্যমে একটি সফল জাতীয় উদ্যোগে পরিণত হবে।’
তিনি সাংবাদিকদের প্রতি আহবান জানান, এই টিকাদান কার্যক্রমের গুরুত্ব ও বার্তাটি আরো বেশি প্রচারের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে, যাতে সবাই টিসিভি টিকাদানের সুফল সম্পর্কে সচেতন হতে পারেন।