বিশ্ব দৃষ্টি দিবস

১৯ বছরে পৌনে ২ কোটির বেশি মানুষকে চক্ষুসেবা দিয়েছে ব্র্যাক

এ বছর বিশ্ব দৃষ্টি দিবসে ব্র্যাক প্রায় ১০ হাজার মানুষকে চক্ষুসেবা দেয়ার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে ব্র্যাক।

নিজস্ব প্রতিবেদক
চক্ষুসেবা দিচ্ছে ব্র্যাক
চক্ষুসেবা দিচ্ছে ব্র্যাক |নয়া দিগন্ত

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বিশ্ব দৃষ্টি দিবসকে সামনে রেখে ব্র্যাক চক্ষু সেবা কার্যক্রমের ১৯ বছর পূর্তি উদযাপন করছে। গত ১৯ বছরে সারাদেশে বিস্তৃত চক্ষুসেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রায় এক কোটি ৭৭ লাখ মানুষকে সেবা দিয়েছে ব্র্যাক। এ বছর বিশ্ব দৃষ্টি দিবসে ব্র্যাক প্রায় ১০ হাজার মানুষকে চক্ষুসেবা দেয়ার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। বিশ্বব্যাপী চোখের যত্নের প্রয়োজনীয়তার ওপর আলোকপাত করে প্রতি বছর পালিত হয় ‘বিশ্ব দৃষ্টি দিবস’।

বর্তমানে দেশের ৬১টি জেলায় সক্রিয় ব্র্যাকের চক্ষুসেবা কার্যক্রম এ বছর ‘বিশ্ব দৃষ্টি দিবস’ উপলক্ষে সারাদেশে ৩৫০টিরও বেশি চক্ষু শিবির এবং ৫০টিরও বেশি সচেতনতামূলক র‌্যালির আয়োজন করছে। প্রায় ১০ হাজার মানুষকে স্বল্পমূল্যে রিডিং গ্লাস বা পাঠের চশমা বিতরণ ও সাশ্রয়ী মূল্যে ছানি অপারেশনসহ প্রয়োজনীয় চক্ষু সেবা দেয়ার লক্ষ্যে সারাদেশে এই কার্যক্রম চলবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, নারী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।

ব্র্যাকের চক্ষুসেবা কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত এক কোটি ৭৭ লাখেরও বেশি মানুষকে সেবা দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে বিনামূল্যে প্রাথমিক দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা থেকে শুরু করে জটিল রোগীর ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখানোর পরামর্শ প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। এই কার্যক্রমের আওতায় এ পর্যন্ত এক কোটি ১০ লাখ মানুষের ‘প্রেসবায়োপিয়া’ বা নিকট দৃষ্টির ত্রুটি শনাক্তকরণে দৃষ্টি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে এবং ২২ লাখেরও বেশি চশমা বিতরণ করা হয়েছে। মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিতে ব্র্যাকের অংশীদার হাসপাতালগুলোর অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে নির্ধারিত স্থানে চোখের ছানির অপারেশন করা হয়। শুধু ২০২৪ সালেই এই কার্যক্রমে ১৭ হাজার ৭৪১টি ছানি রোগ শনাক্ত হয়েছে এবং ১৩ হাজার ১৯১টি ছানি অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে।

দৃষ্টিশক্তির ত্রুটি সংশোধন এবং নিরাময়যোগ্য অন্ধত্ব প্রতিরোধে সচেতনতা গড়ে তুলতে ব্র্যাকের এই কার্যক্রমে অংশীদার হিসেবে কাজ করছে ভিশনস্প্রিং ও সাইটসেভারস। ভিশনস্প্রিং গত ১৯ বছর ধরে ব্র্যাকের দীর্ঘমেয়াদি অংশীদার হিসেবে প্রেসবায়োপিয়া মোকাবিলায় কাজ করছে, যার মাধ্যমে লাখো মানুষ স্বল্পমূল্যে চশমা (রিডিং গ্লাস) ও প্রয়োজনীয় চক্ষু সেবা পেয়ে আসছে। দু’টি উপজেলায় একটি পাইলট কর্মসূচি হিসেবে শুরু হওয়া ব্র্যাকের এই উদ্যোগটি এখন দেশের ৬১ জেলায় বিস্তৃত।

ব্র্যাকের স্বাস্থ্য কর্মসূচির ঊর্ধ্বতন পরিচালক ড. মো: আকরামুল ইসলাম বলেন, ‘চোখের চিকিৎসা সেবার সুযোগ বঞ্চিত মানুষের কাছে এই সেবাগুলো পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে প্রায় দুই দশক আগে ব্র্যাকের এই কার্যক্রম শুরু হয়। আজ বিশ্ব দৃষ্টি দিবসে আমরা আবারো অঙ্গীকার করছি সেই জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানোর, যাদের জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কেড়ে নিচ্ছে নিরাময়যোগ্য অন্ধত্ব।’

বিশ্ব দৃষ্টি দিবসে সবার জন্য স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি সহজলভ্য করার বিষয়ে নিজেদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে ভিশনস্প্রিং বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মিশা মাহজাবীন বলেন, ‘দৃষ্টিজনিত ত্রুটি শুধু যে একটি স্বাস্থ্য সমস্যা তাই নয়, এটি মানুষের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এবং সামাজিক মর্যাদাকেও প্রভাবিত করে। দৃষ্টিজনিত ত্রুটি ও অন্ধত্ব নিয়ে একটি সাম্প্রতিক জাতীয় জরিপ বলছে, বর্তমানে দেশে প্রায় ৭.৫ লাখ মানুষ অন্ধত্বে ভুগছে, যার প্রধান কারণ চিকিৎসাবিহীন ছানি।’

ছানির পাশাপাশি ‘প্রেসবায়োপিয়া’ বা নিকট দৃষ্টির ত্রুটি বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন এই সমস্যায় ভুগছেন, যার মধ্যে বেশিভাগেরই বয়স ৩৫ বছরের বেশি। ব্র্যাক এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলো এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় চক্ষুসেবা প্রদান, সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি এবং দীর্ঘমেয়াদে টেকসই স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে একযোগে কাজ করছে।