সারাদেশে রোববার (১২ অক্টোবর) থেকে অক্টোবর মাসব্যাপী একযোগে ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী প্রায় ৫ কোটি শিশুকে টাইফয়েডের টিকা দেয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: মো: আবু জাফর বলেছেন, আগামীকাল (১২ অক্টোবর) রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে একযোগে শুরু হচ্ছে টাইফয়েডের টিকাদান কার্যক্রম। প্রতিটি স্কুলে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলবে।
শনিবার (১১ অক্টোবর) বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসসকে তিনি একথা জানান।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, সারাদেশে ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী প্রায় ৫ কোটি শিশুকে সরকার বিনামূল্যে এই টিকা দিচ্ছে।
তিনি জানান, আগামীকাল সকাল ৯টায় রাজধানীর আজিমপুর সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। একই সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডা: সায়েদুর রহমান থাকবেন ভিকারুননিছা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব সাইদুর রহমান রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এবং মহাপরিচালক নিজে ধানমন্ডির একটি ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।
মহাপরিচালক বলেন, টাইফয়েডের টিকার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত একটি টিকা। ছাত্র-ছাত্রীরা বিনা ভয়ে এটি গ্রহণ করতে পারবে। তিনি টিকা গ্রহণে শিশুদের অভিভাবকদেরকে সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানান।
মহাপরিচালক বলেন, মূলত দূষিত পানি, খাবারের মাধ্যমে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে টাইফয়েড ছড়িয়ে থাকে। ‘গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ স্টাডি’র তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালে বিশ্বে ৭০ লাখের বেশি মানুষ টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত হয় এবং তার মধ্যে প্রায় ৯৩ হাজার মৃত্যুবরণ করেছে। যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দক্ষিণ এশিয়ায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুরাই টাইফয়েড জ্বরে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। এক সমীক্ষা অনুযায়ী ২০২১ সালে বাংলাদেশে প্রায় ৮ হাজার মানুষ টাইফয়েড জ্বরে মৃত্যুবরণ করে যার মধ্যে ৬৮ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ৬ হাজারই ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু।
মহাপরিচালক বলেন, বর্তমানে বৈশ্বিক এক স্বাস্থ্যঝুঁকি আর উদ্বেগের নাম ওষুধ প্রতিরোধী টাইফয়েড। টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসায় প্রচলিত যেসব অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হয়, তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বর্তমান টাইফয়েড নিরাময়ে কাজ করছে না। ফলে ভয়াবহ ওষুধ প্রতিরোধী টাইফয়েড জ্বরের প্রকোপ দিন-দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। টাইফয়েড টিকা গ্রহণ করলে এই জ্বরে আক্রান্ত হবার হার বহুলাংশে হ্রাস পাবে ফলে অ্যান্টিবায়োটিকের অপপ্রয়োগ কমে আসবে।
এই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল ১২ অক্টোবর হতে মাসব্যাপী সারাদেশে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২৫ শুরু হতে যাচ্ছে যা শিশুদের টাইফয়েড সংক্রমণজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যুহার বহুলাংশে হ্রাস করবে।
তিনি বলেন, ক্যাম্পেইনের আওতায় প্রায় ৫ কোটি শিশুর প্রতিজনকে অত্যন্ত কার্যকর ১ ডোজ টাইফয়েড টিকা বিনামূল্যে প্রদান করা হবে।
উল্লেখ্য, টিকাদান কার্যক্রম চলাকালে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত প্রাক-প্রাথমিক (প্লে, নার্সারি, কিন্ডারগার্টেন) থেকে ৯ম শ্রেণি/সমমান (মাদরাসা, ইংরেজি মিডিয়াম) পর্যন্ত সব ছাত্র-ছাত্রীকে নিজ-নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বহির্ভূত ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী সব শিশুকে কমিউনিটি পর্যায়ে ইপিআই টিকাদান কেন্দ্রে বিনামূল্যে এক ডোজ টাইফয়েড টিকা প্রদান করা হবে।
ইতোমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট অধিদফতর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, কওমি মাদরাসা, স্কাউট ও গার্লস গাইড’র সাথে সমন্বয়পূর্বক টিকা কার্যক্রমকে সফলভাবে বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
এছাড়াও সমাজ কল্যাণ অধিদফতর, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো, এবং বিভিন্ন বেসরকারি এনজিও’র সহযোগিতায় সুবিধাবঞ্চিত শিশু, বেদে পল্লী, চা বাগান, এতিমখানা, শিশু/কিশোর/কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্র, পথশিশু, যৌনপল্লীতে থাকা শিশুদের তালিকা করে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় টাইফয়েড টিকা প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
মহাপরিচালক বলেন, টাইফয়েড টিকা খুবই নিরাপদ। এরপরেও টিকাদান পরবর্তী বিরূপ ঘটনা মোকাবেলার জন্য জেলা/উপজেলা এবং সিটি করপোরেশন পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। সব কমিটির প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। অর্থাৎ নিরাপদে যেকোনো শিশু টাইফয়েডের টিকা নিতে পারবে।
সূত্র : বাসস