লিবিয়া উপকূলে নৌকাডুবি, মৃত্যু ৪ বাংলাদেশীর

লিবিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আল-খুমস উপকূলে প্রায় ১০০ অভিবাসী বহনকারী দু’টি নৌকাডুবির ঘটনায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। নিহত চারজনই বাংলাদেশি বলে জানিয়েছে লিবিয়ান রেড ক্রিসেন্ট।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
নৌকাডুবি
নৌকাডুবি |সংগৃহীত

লিবিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আল-খুমস উপকূলে প্রায় ১০০ অভিবাসী বহনকারী দু’টি নৌকাডুবির ঘটনায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। নিহত চারজনই বাংলাদেশি বলে জানিয়েছে লিবিয়ান রেড ক্রিসেন্ট।

গত বৃহস্পতিবার রাতে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি থেকে প্রায় ১১৮ কিলোমিটার (৭৩ মাইল) পূর্বে অবস্থিত উপকূলীয় শহর আল-খুমসের কাছে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। নৌকাগুলো ডুবে যাওয়ার পর শনিবার (১৫ নভেম্বর) লিবিয়ান রেড ক্রিসেন্ট এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সংস্থাটি আরো জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার আল-খুমস উপকূলে দু’টি নৌকার উল্টে যাওয়ার খবর পেয়ে উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। দু’টি নৌকার মধ্যে প্রথমটিতে ২৬ জন বাংলাদেশী ছিলেন। আর দ্বিতীয় নৌকাটিতে ৬৯ জন ছিলেন। এর মধ্যে দু’জন মিসরীয় এবং ৬৭ জন সুদানি নাগরিক ছিলেন। তাদের মধ্যে আট শিশুও ছিল। তবে প্রথম নৌকার ২৬ জন বাংলাদেশীর মধ্যে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তাদের নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি। জরুরি উদ্ধারকারী দল বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের উদ্ধারের চেষ্টা করছে। উদ্ধার অভিযানে লিবিয়ার কোস্টগার্ড এবং আল-খুমস বন্দর নিরাপত্তা সংস্থা রয়েছে।

লিবিয়ান রেড ক্রিসেন্ট প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, স্বেচ্ছাসেবকেরা উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের প্রাথমিক চিকিৎসা করছেন। জীবিতরা কম্বল মুড়ি দিয়ে বসে আছেন। রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, মৃতদেহগুলো শহরের পাবলিক প্রসিকিউশনের নির্দেশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরেই ত্রিপোলির উপকূলীয় এলাকা থেকে ইউরোপমুখী অনিয়মিত অভিবাসীদের যাতায়াত অব্যাহত রয়েছে। তাই ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার সময়ে এই যাতায়াত পথে নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এই অবৈধ পথে অভিবাসীদের যাতায়াত নিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মূলত অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার জন্য জনপ্রিয় রুট হল লিবিয়া। ২০১১ সালে ন্যাটো সমর্থিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই দেশটি ইউরোপগামী অভিবাসীদের ট্রানজিট রুটে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে সাড়ে ৮ লাখেরও বেশি অভিবাসী লিবিয়ায় অবস্থান করছে। কিন্তু গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই অভিবাসীদের সাথে অরাজকতা শুরু হয়েছে। তারা সেখানে ঠিকঠাক কাজ পায় না। এমনকি তারা নিয়মিতভাবে নির্যাতন, ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির শিকার হয়ে থাকে। ইউরোপের দেশগুলো রাষ্ট্রীয় উদ্ধার অভিযান ধাপে ধাপে বন্ধ করায় সমুদ্রযাত্রা আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। যার ফলে চলতি বছরে মধ্য ভূমধ্যসাগর দিয়ে গন্তব্যে যেতে গিয়ে এক হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

অন্যদিকে, অভিবাসীদের উপর নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানাতে গত সপ্তাহে জেনেভায় জাতিসঙ্ঘের এক বৈঠকে ব্রিটেন, স্পেন, নরওয়ে, সিয়েরা লিওন-সহ বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র লিবিয়ার প্রতি আটক কেন্দ্রগুলি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো এসব কেন্দ্রে অভিবাসী ও শরণার্থীদের উপর নির্যাতন, দুর্ব্যবহার এবং হত্যাকাণ্ড চালানোর অভিযোগ করে আসছে।

সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস