দীর্ঘ ১৭ বছর পর আওয়ামী দুঃশাসন থেকে মুক্তি পর বাংলাদেশেকে আন্তর্জাতিক নেতৃত্বসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে তরুণদের আরো এগিয়ে আসতে হবে। দেশের সঙ্কট মোকাবেলা ও নিরাপত্তায় বিভিন্ন সেক্টরে সক্ষমতা বাড়ানোর সাথে সাথে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সাথে একটি ভারসম্যপূর্ণ সম্পর্কে যেতে হবে। প্রবাসীরা নিজেদের মেধা ও দূরদর্শিতা দিয়ে স্ব-উদ্যোগে দেশের উন্নয়নে কাজ শুরু করতে হবে। তরুণদের সুশাসন ও টেকসই উন্নয়নে সহযোগী করে বিভিন্নভাবে কাজে লাগাতে হবে।
শনিবার (৯ আগস্ট) লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল ইয়ুথ সামিট ২০২৫-এ এসব কথা বলেন বক্তারা।
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মেধাবী বাংলাদেশী তরুণদের এক সুতোয় গেঁথে আন্তর্জাতিক নেতৃত্বসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে উদ্যোগ নিয়েছে সেন্টার ফর বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যান্ড ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট। তাদেরই উদ্যোগে লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো গ্লোবাল ইয়ুথ সামিট। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশী তরুণ পেশাজীবী, গবেষক ও তরুণ নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষকরা অংশগ্রহণ করেন।
সামিটে অংশ নিয়ে বৈশ্বিক বিজ্ঞানী, গবেষক ও বিভিন্ন পেশায় কর্মরত পেশাজীবীরা আগামীর বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে তাদের কর্ম অভিজ্ঞতার আলোকে বিভিন্ন মতামত তুলে ধরেন। সুযোগ পেলে বাংলাদেশের উন্নয়নে তাদের পেশাগত জীবনে অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সেন্টার ফর বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যান্ড ইয়ুথ ডেভেলপমেন্টের আহ্বায়ক আলিয়ার হোসেন, সহ-আহ্বায়ক ড. মুজিবুর রহমান এবং প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও সদস্যসচিব আবদুল্লাহ মাহমুদের সার্বিক সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটিতে বৈশ্বিক বিভিন্ন পেশাজীবীর মধ্যে অংশ নেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড রবার্টস, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, নিউইয়র্কের স্টেট ইউনিভার্সিটির এসিস্টেন্ট প্রফেসর আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. ইমরান আনসারী, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস স্কুলের এক্সিকিউটিভ ডিন অধ্যাপক জোনাথন লিউ, একাডেমিক ওয়েস্ট লন্ডন ইউনিভার্সিটির জ্বালানি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিষয়ক পরামর্শক মালাক হামদান আল-নাঈমি, রাজনৈতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক শাফকাত রাব্বি, ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির গবেষক ড. মোবাশার হাসানসহ অনেকে।
ড. ইমরান আনসারী বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ নানা ধরনের নিরাপত্তা সঙ্কটে রয়েছে। এই সঙ্কট উত্তরণে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সাথে একটি ভারসম্যপূর্ণ সম্পর্কে যেতে হবে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশকে তার গোয়েন্দা ও সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তৃতীয়ত, অভ্যন্তরীণ যে নিরাপত্তা সঙ্কট তৈরি হয়েছে তা মোকাবেলায় অতি দ্রুত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক ক্ষমতা আনয়নে উৎসাহিত করতে হবে, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে। এ ছাড়া বাংলাদেশে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মধ্যে রযেছে আওয়ামী ক্যাডারদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, রোহিঙ্গা রিফিউজি সঙ্কট, পার্বত্য চট্রগ্রাম কেন্দ্রিক বিভিন্ন বিদ্রোহী গ্রুপের তৎপরতা এবং ভারত কর্তৃক বাংলাদেশে পুশইন। এসব নিরাপত্তা সঙ্কট মোকাবেলায় তরুণদের সজাগ থেকে সক্রিয় উদ্যোগ নিতে হবে।
শাফকাত রাব্বি বলেন, প্রবাসীরা অনেকে দেশের জন্য কাজ করতে চান। কিন্তু সুযোগ পান না। অনেকে বলেন- দেশে কাজ করার সুযোগ খুঁজছি কিন্তু দেশ দিচ্ছে না। এইটা না বলে আপনারা নিজেরা কী করতে পারবেন সেটা করে ফেলেন। নিজেকে জিজ্ঞেস করেন- কী করতে পারি দেশের জন্য। নিজের সক্ষমতা বা ট্যালেন্ট দিয়ে দেশের জন্য কাজ শুরু করা দরকার। সবাই ছোট ছোট কাজ দিয়ে শুরু করলে দেশের জন্য অনেক কিছু করা যাবে।
সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা ও সদস্যসচিব আবদুল্লাহ মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সহযোগী থিঙ্কট্যাংক হিসেবে ভূমিকা রাখতে চায় সেন্টার ফর বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যান্ড ইউথ ডেভেলপমেন্ট। অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পরিবেশ ও জলবায়ু, যুব উন্নয়ন, নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মতো বিষয়গুলো সামনে রেখে বৈশ্বিক বিভিন্ন পর্যায়ের দক্ষ অভিজ্ঞ পেশাজীবী ও তরুণদের মেধা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চাই আমরা।’
সামিটের আয়োজকরা জানান, বাংলাদেশের বর্তমান ইস্যু ও যুব উন্নয়ন বিষয়ক এই সামিটের উদ্দেশ্য হলো দেশের সামনে থাকা জরুরি চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা এবং দেশের ভবিষ্যতের মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচিত তরুণদের ক্ষমতায়ন করা। জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচারের মতো জটিল সমস্যার মোকাবিলায় বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন কার্যকর সমাধান তৈরিতে তরুণ প্রজন্মের সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।