মিসরের রাজধানী কায়রোর তাব্বা এলাকায় বাংলাদেশী নাগরিকদের একটি অপহরণের ঘটনা মিসরজুড়ে আলোচিত হয়েছে। মিসরি এক নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৪ জুন কায়রো পুলিশ অভিযান চালিয়ে চার বাংলাদেশী অপহরণকারীসহ এক অপহৃতকে উদ্ধার করে।
উদ্ধার ব্যক্তি হচ্ছেন সিরাজগঞ্জ জেলার অধিবাসী নাহিদ হাসান। অপহরণকারীরা হলেন কুমিল্লার মোহাম্মাদ সোলাইমান বিন মিন্নাত আলী, কিশোরগঞ্জের মো: শরিফুল ইসলাম, সিলেটের মামুনুর রশিদ ও নুর আহমদ। তাদের সবাইকে আটক করে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়।
পুলিশি তদন্তে জানা গেছে, বিবাহিত নাহিদ হাসানকে আশের মিন রমাদান এলাকা থেকে তুলে এনে তাব্বার এলাকায় সোলাইমান ও শরিফ। পরে তাকে ওদের ফ্ল্যাটে চার দিন আটকে রাখা হয়। এ সময় নাহিদের মিসরীয় গার্লফ্রেন্ড বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করলে তারা অভিযান চালিয়ে দরজা ভেঙে অপহৃতকে উদ্ধার ও অপরাধীদের গ্রেফতার করে।
অপহরণকারীদের প্রাথমিক জবানবন্দিতে উঠে আসে, তাদের মধ্যে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার অবৈধ ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জেরেই এই অপহরণের ঘটনা ঘটে। এছাড়া তারা অবৈধ ডলার লেনদেন, হুন্ডি, সোনা পাচার, মাদক ও মানবপাচারসহ একাধিক অপরাধের সাথে জড়িত বলে স্বীকার করেছে।
অভিযানে সংশ্লিষ্ট বাসা থেকে পুলিশ নগদ প্রায় ৮ হাজার ডলার ও মোটা অঙ্কের মিসরীয় পাউন্ড জব্দ করে। মোহাম্মাদ সোলাইমান ও মোহা: শরিফুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রবেশে এসব অপরাধ পরিচালনা করছিলেন বলে জানা যায়।
গ্রেফতারের পরদিন অভিযুক্তদের মিসরীয় আদালতে তোলা হয়। আদালতের প্রাথমিক রায়ে অপহৃত নাহিদ হাসানকে দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানো হয়। ধারণা করা হচ্ছে, মিসরীয় এক নারীর সাথে বিবাহ গোপন করে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করায় তাকে দ্রুত মিসর ত্যাগে বাধ্য করা হয়। অন্যদিকে, গ্রেফতাররা নিজেদের ছাত্র পরিচয় প্রমাণে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। এজন্য গোপালগঞ্জের মুহিব্বুর রহমান নামের এক ব্যক্তি -যিনি মোহাম্মাদ সোলাইমানের ব্যবসায়িক অংশীদার বলে পরিচিত- আইনি সহায়তার ব্যবস্থা করছেন।
আল-আজহারে অধ্যয়নরত ছাত্রদের অভিযোগ, অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে আল-আজহারের ছাত্র ট্যাগ ব্যবহার করে বাংলাদেশী ছাত্রদের হুমকি-ধামকি, ভয়ভীতি এবং অপরাধমূলক কার্যকলাপে লিপ্ত ছিল। এতে আল-আজহার ও বাংলাদেশী ছাত্রসমাজের সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
মিসরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজ এবং স্থানীয় একাধিক গণমাধ্যমে এই ঘটনাটি প্রচার হলেও বাংলাদেশীদের পরিচয় ও ছবি গোপন রাখা হয়েছে, যা দেখে প্রবাসী বাংলাদেশীরা মিসর সরকারের দায়িত্বশীলতায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।