মালয়েশিয়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত! এক দেয়ালে মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও চার্চ

পৃথিবী জুড়ে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা জাতিগত বৈষম্যের দাবানলে অশান্ত ধর্মীয় সহিষ্ণুতা কিন্তু বৈশ্বিক ধর্মীয় অসহিষ্ণুতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে মালয়েশিয়ায় শত শত বছর ধরে ধরে মাথা উচু করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বানী চিরন্তনীতে জানান দিচ্ছে।

আশরাফুল মামুন, মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত! এক দেয়ালে মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও চার্চ
মালয়েশিয়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত! এক দেয়ালে মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও চার্চ |নয়া দিগন্ত

বিশ্বজুড়ে ধর্ম যুদ্ধ, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা জাতিগত বিদ্রোহ এখন বিশ্ব শান্তির অন্তরায়। পৃথিবীর প্রত্যেক ধর্মগ্রন্থে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে ধর্মীয় আচার আচরণ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে আজ পৃথিবী জুড়ে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা জাতিগত বৈষম্যের দাবানলে অশান্ত ধর্মীয় সহিষ্ণুতা কিন্তু বৈশ্বিক ধর্মীয় অসহিষ্ণুতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে মালয়েশিয়ায় শত শত বছর ধরে ধরে মাথা উচু করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বানী চিরন্তনীতে জানান দিচ্ছে। মাত্র ২০০ মিটার এর জায়গায় মধ্যে গড়ে উঠেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য পবিত্র মন্দির, মুসলিমদের পবিত্র মসজিদ, খ্রীষ্টানদের জন্য পবিত্র গীর্জা চাইনিজ ধর্মাবলম্বীদের জন্য চার্চ। এই পবিত্র স্থান টি রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে কুয়ালা সেলাঙ্গর রাজ্যের আজোক বুকিত রতান নামক স্থানে অবস্থিত। এই ঐতিহাসিক স্থাপনা গুলো দেখতে বিভিন্ন দেশের পর্যটকেরাও ভির করেন। কুয়ালালামপুর থেকে সেখানে যেতে ৫ লেনের সুপ্রশ্বস্ত মহাসড়কের দু পাশে সাড়ি সাড়ি পাম বাগানের প্রাকৃতিক সবুজের মেলা বিমোহিত করে। ২০/৩০ কিলোমিটারের মধ্যে নেই কোন জনবসতি । সেখানে ১৮ বছর ধরে ব্যবসা করেন হাফেজ হুসাইন আহমেদ।

এই ৪ টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুলো পাশাপাশি ঘেষেই অবস্থিত। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে সন্ধ্যার সাঝ বাতির সাথে সাথেই বেজে মন্দিরের ঢোল আর উলুধ্বনি, সেই সাথে ভেসে মুয়াজ্জিনের সুমধুর আযানের ধ্বনি ও গীর্জার টুং টাং ঘন্টা। শুধু একটি রাস্তা ধরেই ৪ টি ধর্মীয় স্থাপনায় অনায়াসেই যাওয়া যায়। দেশ বিদেশের যে কোন ধর্মালম্বীরা এসব স্থাপনা পরিদর্শন করতে পারেন এর জন্য কোন পূর্বানুমতির প্রয়োজন নেই। শুধু মন্দিরের ভিতরে ছবি তোলা নিষেধ।

ওয়ান মালয়েশিয়া বুকিত রতানের কর্মকর্তা স্থানীয় নাগরিক ৮০ বছর বয়সী মোহাম্মদ রসলি বললেন, সামনের বছরে এখানের মসজিদ টি ১০০ বছরে পা দিবে। এখানে ধর্মীয় স্থাপনার গুলোর মধ্যে সবচের পুরানো হচ্ছে কোয়েল মন্দির। যার বয়স ১২০ বছর। এর নির্মাণ শৈলী কারুকার্জ এত নিখুঁত যে মানুষের হাতের ছোঁয়ায় এটি সম্ভব নয়। বিশেষ ধরনের পাথর খোদাই করে অসাধারণ রুপ দেওয়া হয়েছে। ৪ টি স্থাপনার মধ্যে মন্দির মসজিদ সব সময় উম্মুক্ত থাকে আর গীর্জা ও চার্চ তাদের নির্ধারিত ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের সময় খোলা থাকে। গীর্জা ও চায়নিজদের টেম্পলটির বয়সও ৫০ বছর হয়েছে।

মসজিদের নামাজ পড়তে আসা মুসল্লীরা দাবি করেন মাত্র ২০০ মিটার জায়গার মধ্যে ৪ টি ধর্মীয় স্থাপনার নজির বিশ্বের আর কোথাও নেই। এমনকি বিগত ১০০ বছরের মধ্যে এই স্থাপনা এলাকায় কোন সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বা অসহিষ্ণুতার কোন নজির নেই। আমরা একে অপরের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ করি এবং স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশগ্রহণ করি এভাবেই শত বছর ধরে আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুন্ন আছে। পরস্পরের মধ্যে আন্তরিক সুসম্পর্কের ধারা শত বছর ধরে অব্যাহত রেখে মালয়েশিয়া ধর্মীয় সম্প্রীতির এক অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। যা বহি: বিশ্বের ধর্মযুদ্ধে লিপ্ত জাতি গোষ্ঠীর জন্য এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।