চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিংয়ে শনিবার শুরু হয়েছে ‘গ্লোবাল সাউথ মিডিয়া অ্যান্ড থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ফোরাম ২০২৫’। উন্নয়নশীল দেশগুলোর বৈশ্বিক কণ্ঠ শক্তিশালী করার লক্ষ্য নিয়ে আয়োজিত এ ফোরামে যোগ দিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শত শত গবেষক, সাংবাদিক, নীতি-নির্ধারক ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি।
পাঁচ দিনব্যাপী এ ফোরামের মূল প্রতিপাদ্য ‘এম-পাওয়ারিং গ্লোবাল সাউথ, ন্যাভিগেটিং গ্লোবাল চেইঞ্জেস’।
দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত এ আয়োজন যৌথভাবে করছে সিনহুয়া নিউজ অ্যাজেন্সি, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ইউনান প্রাদেশিক কমিটি ও ইউনান প্রাদেশিক সরকার। প্রথম আসর বসেছিল গত বছর ব্রাজিলের সাও পাওলোতে।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১১০টি দেশের ২৬০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫০০ প্রতিনিধি এ ফোরামে অংশ নিচ্ছেন। বাংলাদেশের প্রতিনিধিরাও এ ফোরামে যোগ দিয়েছেন।
ফোরামে আলোচনার মূল বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে- শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ঐকমত্য গঠন, নতুন উন্নয়নচালক নির্ধারণ, সহযোগিতার ক্ষেত্র বিস্তার এবং সভ্যতার মধ্যে সংলাপ জোরদার।
বাংলাদেশ থেকে অংশ নেয়া ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি)-এর নির্বাহী সম্পাদক ও কসমস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাহার খান বলেন, ‘আমাদের গল্প হেজেমনিক কণ্ঠ দ্বারা সংজ্ঞায়িত হবে না। এগুলোকে আমাদের বৈচিত্র্য, মর্যাদা ও প্রাণশক্তি প্রতিফলিত করতে হবে। এই ফোরাম আমাদের নিজেদের বর্ণনা গড়ে তোলার ক্ষমতায়ন করুক, ঐক্যে, দৃষ্টিভঙ্গিতে ও সাহসে।’
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ৪০ শতাংশ জিডিপি ও ৮০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রতিনিধিত্বকারী গ্লোবাল সাউথকে এখন আন্তর্জাতিক আলোচনার ক্ষেত্রেও শক্তিশালী কণ্ঠে পরিণত হতে হবে। এজন্য অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন কর্মশালা ও পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বাস্তবসম্মত প্রকল্প ও সমাধান প্রস্তাব করবেন।
এই আয়োজনে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে গ্লোবাল সাউথ জয়েন্ট কমিউনিকেশন পার্টনারশিপ নেটওয়ার্ক, যেখানে যুক্ত হয়েছে ৯৫টি দেশ ও অঞ্চলের এক হাজারেরও বেশি গণমাধ্যম ও থিঙ্ক ট্যাঙ্ক।
চীনের পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চেং মানলি বলেন, ‘গ্লোবাল সাউথের ভাগ্য অন্যরা নির্ধারণ করবে না, বরং আমাদের নিজেদের হাতে গড়তে হবে। এজন্য কৌশলগত ঐক্য, দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টি ও রাজনৈতিক সাহস অপরিহার্য।’
মোজাম্বিকের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আইরেস আলি বলেন, ‘গ্লোবাল সাউথ শুধু ভৌগোলিক ধারণা নয়, এটি একটি কণ্ঠ, একটি শক্তি ও সংগ্রাম ও আশার ইতিহাস।’
কাতারের পেনিনসুলা পত্রিকার সম্পাদক খালেদ মুবারক আল-শাফি মত দেন, শান্তি প্রতিষ্ঠায় ঐক্য ও বোঝাপড়া বাড়ানো এবং সব ধরনের সহিংসতা ও বৈষম্য প্রত্যাখ্যান করা জরুরি।
অংশগ্রহণকারীরা গণমাধ্যম ও থিঙ্ক ট্যাঙ্কের অংশীদারিত্ব জোরদারের ওপরও গুরুত্ব দেন। আর্মেনপ্রেস-এর পরিচালক নারিনে নাজারিয়ান বলেন, ‘জ্ঞানকে বর্ণনার সাথে যুক্ত করতে হবে এবং সেই বর্ণনা মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে।’
এদিকে সিনহুয়া ইনস্টিটিউট প্রকাশ করেছে একটি প্রতিবেদন ‘অ্যান্সারিং দা কোয়েশন্স অব আওয়ার টাইম: দ্য গ্লোবাল সিগনিফিক্যান্স অ্যান্ড প্রাকটিক্যাল ভ্যালু অব চায়নাজ পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল গুডস’। এতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা, জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য ও স্বাস্থ্য সংকটের মতো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বর্তমান আন্তর্জাতিক কাঠামো পর্যাপ্ত নয়। এজন্য নতুন ধরনের পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল গুডস প্রয়োজন, যা হবে দূরদর্শী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও উদ্ভাবনী।