মালয়েশিয়ায় সৌদিয়ান গোলাপী পাথরের মসজিদে বিশ্ব পর্যটকদের ঢল

মালয়েশিয়াকে দক্ষিণ এশিয়ার ইউরোপ বলা হয়। কারণ তাদের সুখী ও সুশৃঙ্খল উন্নত জীবনধারার পাশাপাশি দেশটিতে নিরাপদ বিনোদন ও পর্যটনে বিখ্যাত স্থাপনা। ধর্মীয় স্থাপনার পাশাপাশি রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে দেশজুড়ে বিস্তৃত আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন স্পট।

আশরাফুল মামুন, মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়ায় সৌদিয়ান গোলাপী পাথরের মসজিদে বিশ্ব পর্যটকদের ঢল
মালয়েশিয়ায় সৌদিয়ান গোলাপী পাথরের মসজিদে বিশ্ব পর্যটকদের ঢল |আশরাফুল মামুন, মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়াকে দক্ষিণ এশিয়ার ইউরোপ বলা হয়। কারণ তাদের সুখী ও সুশৃঙ্খল উন্নত জীবনধারার পাশাপাশি দেশটিতে নিরাপদ বিনোদন ও পর্যটনে বিখ্যাত স্থাপনা। ধর্মীয় স্থাপনার পাশাপাশি রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে দেশজুড়ে বিস্তৃত আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন স্পট। দেশটির ইসলামি ধর্মীয় স্থাপনাগুলোকে শতভাগ সরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্মাণ ও পরিচালিত হয় বলে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলা হয়।

এর মধ্যে অন্যতম নানন্দিকতার দৃষ্টান্ত পিংক পাথরের নির্মিত মসজিদ পুত্রা। পুত্রা মসজিদটি রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে দেশটির প্রশাসনিক কেন্দ্র পুত্রাজায়ায় অবস্থিত। মসজিদটি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাথেই অবস্থিত। এর মাঝে দূরত্ব মাত্র ১০০ মিটার। প্রধনমন্ত্রীর কার্যালয়ের গম্বুজটি সবুজ পাথরে নির্মিত আর পুত্রা মসজিদটি সৌদই আরব থেকে আনা গোলাপী বা পিংক কালারের পাথরে নির্মিত হয়ে আজ থেকে ২৫ বছর আগে ১৯৯৯ সালে। কিন্তু মসজিদটির কাছে গেলে মনে এটা সদ্য নির্মিত হয়েছে। মসজিদটিতে প্রতিদিন সারা বিশ্ব থেকে হাজার হাজার মুসলিম ননমুসলিম পর্যটক এখানে আসেন।

দক্ষিণ এশিয়ায় এ ধরনের গোলাপি মসজিদ আর কোথাও দেখা যায় না। কেন সারা বিশ্বের পর্যটকেরা এখানে ভীড় করে এ বিষয়ে পুত্রা মসজিদের সিকিউরিটি অফিসার মোহাম্মদ বাকরি বিন ওহাব বলেন, ‘পুত্রাজায়া ফেডারেল টেরিটরিতে মার্সি টান্ডা এবং ‘সরকারি প্রিসিঙ্কটের’ ‘ধর্মীয় কেন্দ্র’ হিসেবে পুত্রা মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। মালয়েশিয়ার প্রথম প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত টুঙ্কু আবদুর রহমান পুত্রা আল-হাজের নামানুসারে মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছিল মসজিদ পুত্রা। পুত্রাজায়া লেকের ওপর ১০ একর জমির উপর অবস্থিত মসজিদটির অবস্থান দাতারান পুত্রা এবং জাম্বাতান পুত্রার সাথে মিলে তৈরি করা হয়েছিল। এই মসজিদের নির্মাণ মধ্যপ্রাচ্য এবং ঐতিহ্যবাহী মালয় ধারণার সংমিশ্রণ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। সৌদিয়ান বিশেষ গোলাপি পাথারের কারণে দিন ও রাতের বেলায় পিংক বা গোলাপি রংয়ের দ্যুতি ছড়াচ্ছে। বছরে মালয়েশিয়ায় লাখ লাখ বাংলাদেশী পর্যটক আসেন মালয়েশিয়ায়। তারা কুয়ালালামপুরে এসেই প্রথমেই এই গোলাপি মসজিদ দেখতে আসেন এবং নামাজ পড়েন।’

মসজিদটির নকশা দুটি অঞ্চলে বিভক্ত, যথা প্রধান মসজিদ এবং সাহান। সাহান হল দাতারান পুত্রার সামাজিক কার্যকলাপ এবং মসজিদের অভ্যন্তরে ধর্মীয় কার্যকলাপের মধ্যে একটি স্থানান্তর স্থান, পাশাপাশি এটি একটি অতিরিক্ত ইবাদতের স্থান যা ভেতরের অংশে ৫০০০ মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করতে পারে। পুত্রা মসজিদের গম্বুজটি গোলাপী এবং এর নকশা আরবস্কু ভিত্তিক, সৌদিআরব থেকে এই গোলাপী বা পিংক পাথর সংগ্রহ করা হয়েছে যা মিশরের মসজিদের গম্বুজগুলিতে পাওয়া উদ্ভিদের ধারণার ওপর ভিত্তি করে খোদাই করা হয়েছে। গম্বুজটি ছাড়াও, এই মসজিদের সৌন্দর্য অন্যান্য অংশেও দেখা যায় যেমন সেঙ্গাল কাঠের তৈরি এর দরজা, কার্পেট এবং হল সজ্জার পছন্দ যা সফলভাবে মালয় শিল্প এবং ইসলামী মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে উপাদানগুলিকে উন্নত করেছে। ১১৬ মিটার উঁচু মিনারটি ১২০২ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত সিতি জুবাইদা মসজিদ, যা ইরাকের বাগদাদের জুমুরুদ খোতুন মসজিদ নামেও পরিচিত, এর নকশা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল। মোট, পুত্রা মসজিদের ভেতরের অংশ ও সামনের নামাজ স্থানে একসাথে ১৫ হাজার মুসল্লি ধারণ করতে পারে।