জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ড. মো: জাহাঙ্গীর আলম স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘ভাঙা নয় বরং মূল নকশায় ফিরছে ‘অঞ্জলি লহ মোর ভাস্কর্য।’
তিনি আরো বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের পর শিক্ষার্থীদের যে কয়েকটি দাবি ছিল সেগুলোর মধ্যে ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলার দাবি ছিল। কিন্তু আমরা অন্য দাবিগুলো পূরণে উদ্যোগ নিলেও সেসময় ভাস্কর্যটি নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। আমরা এখন এটি সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছি। ভাস্কর্যটির মূল যে ডিজাইন ছিল, সেই ডিজাইনে এখন ফিরবে।’
এর আগে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের উদ্যোগে নির্মিত বিতর্কিত ভাস্কর্য ‘অঞ্জলি লহ মোর’ নিয়ে আলোচনার ঝড় চলছে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়, ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে।
ভিসি অধ্যাপক ড. মো: জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেন— ‘ভাস্কর্যটি যেভাবে তৈরি করার কথা ছিল, আগের প্রশাসন তা করেনি। তাই ৫ আগস্টের পর এটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়। বর্তমানে সেটি ভেঙে নতুন করে সংস্কারের কাজে হাত দেয়া হলে বিষয়টিকে ভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা ভাস্কর্যটি সংস্কার করছি যেন জলাধারটির সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পায়।’
উল্লেখ্য, ভাস্কর্যটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের পাশের পুকুরে স্থাপন করা হয়। নির্মাণের সময় নকশা ছিল একরকম, আর বাস্তবায়ন ছিল ভিন্ন। মূল নকশায় ছিল না ‘দুটি অদ্ভুত হাত’, যা পরবর্তীতে যোগ করা হয় এবং যাকে ঘিরে তৈরি হয় বিতর্ক। অনেকে এটিকে ‘সাম্প্রদায়িক প্রতীক’ বলেও আখ্যা দেন।
এই বিতর্কের মাঝেই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী আহমদ আব্দুল্লাহ।
তিনি বলেন— ‘অঞ্জলি লহ মোর শব্দের ভিতরে আগেরকার দুর্নীতিবাজ ভিসি সৌমিত্র শেখর সাহেবের পাশের দেশের প্রতি ও সনাতন ধর্মের প্রতি প্রেম ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। এখানে না আছে আমাদের ভূখণ্ডের কোনো নির্যাস, না আছে আমাদের জাতি সত্ত্বার কোনো পরিচয়। অর্থাৎ এটা স্পষ্টতই একটা সাম্প্রদায়িক প্রতীক।’
অন্যদিকে, স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান রনি জানান— ‘যেকোনো দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের জন্য কিছু বিষয় আগে থেকেই ভাবতে হয়। প্রথমত, এই উন্নয়ন পরিবেশের কোনো ক্ষতি করবে কি না, পরিবেশের জন্য উপকারী কি না, অথবা আদৌ সেটা দীর্ঘস্থায়ী হবে কি না। কিন্তু আমার মনে হয়, ‘অঞ্জলি লহ মোর’–এর ক্ষেত্রে এসব কোনো দিকই বিবেচনা করা হয়নি। অনেকে দেখছি নজরুলের গানের সাথে ভাস্কর্যটির সামঞ্জস্য খুঁজতে চাচ্ছেন। কিন্তু এটা কি হতে পারে না যে, ভাস্কর্যটি টিকিয়ে রাখার জন্যই এর নাম দেয়া হয়েছিল ‘অঞ্জলি লহ মোর’?
ভাস্কর্য নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. মোহিত উল আলমের সময় নির্মিত হয়েছিল ‘সিন্ধু সারোস’ নামে একটি স্থাপনা—
যা কলা অনুষদের সামনের পুকুরে চোখধাঁধানো এক ভাসমান কাঠামো হিসেবে দাঁড়িয়ে ছিল। সৌন্দর্যে মোহিত করেছিল সকলকে। পরে অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর ভিসি হলে সেটি ভেঙে স্থাপন করা হয় ‘অঞ্জলি লহ মোর’।
তবে সময়ের আবর্তে, মতের ভিন্নতায়, আজ সেই ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ফিরে আসছে তার মূল পরিচয়ে— নকশার আদলে, অর্থবোধের ভারে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় হয়ে।