‘রাজনৈতিক মত ভিন্ন হতে পারে কিন্তু যদি কখনো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত হয় বা ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ ওপর হুমকি আসে তাহলে ছাত্রশিবির বসে থাকবে না,’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের মাঠে শাখা ছাত্রশিবিরের আয়োজিত নবীন বরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী ইসলামী ছাত্রশিবির। এটি শুধু একটি ছাত্র সংগঠন নয়, এটি দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্থ রক্ষায় দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিশীল।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ জাহাজের মতো। তবে চালানোর মতো ভালো নাবিক নেই। এছাড়া সুন্দর বাগান আছে কিন্তু তা দেখাশোনার মতো মালি নেই। আমাদের দেশের নেতারা চিন্তা করে কীভাবে দোকান দখল করে চাঁদাবাজি করবে। কীভাবে বুড়িগঙ্গা নদীর আশপাশ দখল করবে। কিন্তু দেশ গঠনে কাজ করে না তারা।’
ছাত্র রাজনীতিকে গালাগালি থেকে গলাগলিতে রূপান্তরের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতি জাতির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গঠনের ক্ষেত্র। গালি দিয়ে কিংবা প্রতিপক্ষকে হেয় করে নেতৃত্ব তৈরি হয় না। গোপালগঞ্জের ঘটনা প্রমাণ করে, বাংলাদেশে এখনো ফ্যাসিবাদের নির্মূল হয়নি।’
শিবিরের এ শীর্ষ নেতা বলেন, ‘পৃথিবীর একটি অর্জন অন্য একটি অর্জনের পথ খুলে দেয়। কোনো অর্জনের পর অতি উৎসাহী না হয়ে পরবর্তী অর্জনের জন্য নতুন পরিকল্পনা করতে হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমস্যা হলো- পুরান ঢাকার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত, লাইব্রেরি অসুবিধা ও গবেষণার সুযোগ না থাকলেও এসব সমস্যাকে পার করে এগিয়ে যেতে হবে। জবি স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। এটা একটি অন্যতম ইতিহাস।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখি, সেখানে উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন শিক্ষার্থী কম। বিশ্ববিদ্যালয় মানুষ তৈরির কারখানা হওয়া উচিত। কিন্তু এখানে তা হয় না। বুয়েটে আবরারকে যারা হত্যা করে, জবির বিশ্বজিৎ হত্যা করে, জাবিতে ধর্ষণে সেঞ্চুরি করে উদযাপন করে তাদের মানুষ বলা যায় না। এ তরুণ সমাজকে নিয়ে সৎ, দেশপ্রেমিক ও দক্ষ হবে।’
এদিন অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম অন্য সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে শুরু করেছি। আমরা রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন চাই। ছাত্রশিবির আজকে যেই উদ্যোগ নিয়েছে অন্য ছাত্রসংগঠনকে এ রকম আয়োজনের আহ্বান জানাই।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শাখা শিবিরের সভাপতি মো: রিয়াজুল ইসলাম। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম আরিফ। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন, ছাত্র হল প্রোভোস্ট-১ ও আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান সাদী উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. মির্জা গালিব, জামায়াতে ইসলামীর পল্টন থানার আমির ও শাখা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি শাহীন ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলোয়ার হোসাইন সাইদিসহ সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও শাখা শিবিরের অন্য নেতৃবৃন্দ ও নবীন শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।