জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র, জুলাই বিপ্লবী ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার অবস্থান নেয়া শহীদ শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে শোক, প্রতিবাদ মিছিল, দোয়া ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় শিক্ষার্থীরা জমায়েত হন। পরে সেখান থেকে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ, শপথ পাঠ এবং শহীদ হাদির রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় মিছিলে, ফ্যাসিবাদের দালালেরা, হুশিয়ার সাবধান; ভারতের দালালেরা, হুশিয়ার সাবধান; আমার ভাই শহীদ কেনো, ইন্টেরিম জবাব দে; এক দুই তিন চার, লীগ ধর জবাই করো। আমরা সবাই হাদি হবো, গুলির মুখে লড়াই করবো। হাদি ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দিবো না। একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর; ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে দেখা যায় ।
সমাবেশে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির জাবি শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে আমরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছি। ভারতের সহায়তায় এ সময়ে হাজার হাজার নিরীহ তরুণকে হত্যা করা হয়েছে এবং সে রক্তপিপাসা এখনো অব্যাহত রয়েছে। আজকের এ বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই— শহীদ উসমান হাদি ও জুলাই শহীদদের রক্তের ওপর দিয়ে ভারতের সাথে কোনো সম্পর্ক হতে পারে না। বৈধ ও অবৈধভাবে কর্মরত সব ভারতীয় নাগরিককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়তে হবে। খুনি হাসিনাকে হস্তান্তর না করা পর্যন্ত ভারতের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত রাখতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘যারা মিডিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে স্বাভাবিক করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। শহীদ উসমান হাদির রক্তের শপথে ইনকিলাব মঞ্চ থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন সাংস্কৃতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আরো বেগবান হবে।’
ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি নেতা আহসান লাবিব বলেন, ‘আমরা আর রক্ত দিতে প্রস্তুত নই, আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলব। অভ্যুত্থানের নামে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। আমাদের লড়াই বহুমুখী; সুশীলতার নামে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না।’
তিনি অভিযোগ করেন, দেশে ভারতের প্রক্সি রাজনীতি ও প্রশাসনিক প্রভাব বিস্তার করছে।
সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘হাদি ভাইয়ের মৃত্যু কালচারাল ও ইকোনমিক ফ্যাসিজমের পাশাপাশি মিডিয়া ও অ্যাকাডেমিক দালালদের ভূমিকার ফল। ইনসাফ প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে। হাদি ভাইয়ের রেখে যাওয়া লড়াই আমরা নিজেদের লড়াই হিসেবে গ্রহণ করেছি। এ দেশ বাংলাদেশের জনগণের— এ ভূখণ্ড কাউকে ছেড়ে দেয়া হবে না।’
এ সময় জাকসুর ভিপি আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, ‘শহীদ ওসমান হাদির রক্তের বদলা নেওয়ার শপথ নিয়েই আজকের এ প্রতিবাদ সমাবেশ। বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এক ইঞ্চি মাটিতেও ভারতীয় আধিপত্যবাদের কোনো স্থান হবে না। এক হাদিকে হত্যা করে আন্দোলন থামানো যাবে না; বরং তার শাহাদাতের মাধ্যমে বাংলার জমিনে লাখ লাখ হাদির জন্ম হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘শহীদ ওসমান হাদির যে স্বপ্ন, লক্ষ্য ও আদর্শ— আমাদের শরীরে যতক্ষণ এক ফোঁটা রক্ত থাকবে, ততক্ষণ সে চেতনা বাস্তবায়নের সংগ্রাম চলবে। পরে উপস্থিত সবাই ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠে শপথ পাঠ করেন। সমাবেশ শেষে শহীদ শরীফ ওসমান হাদির রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়ার মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ হয়।



