তারুণ্যের উৎসব–২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে গাজীপুরের বোর্ডবাজারে অবস্থিত বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (বিএমটিটিআই) মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সকাল ১০টায় ‘নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে মাদরাসা শিক্ষকগণের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সেমিনারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও দেশের বিভিন্ন মাদরাসার অধ্যক্ষ–সুপারসহ শতাধিক অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষাবিভাগের সচিব মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। তিনি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বলেন, নতুন বাংলাদেশ গঠন করতে হলে মাদরাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী, আধুনিক ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির উপযোগী করতে হবে। শুধু ধর্মীয় জ্ঞান নয়-নৈতিকতা, বিজ্ঞানমনস্কতা, প্রযুক্তিজ্ঞান এবং জীবনঘনিষ্ঠ পাঠ্যক্রম যুক্ত করে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। শিক্ষকরা জাতি গঠনের কারিগর—তাদের হাতেই একটি আলোকিত বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে।
তিনি আরো বলেন, দেশের উন্নয়ন, মানবিক মূল্যবোধ এবং শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠায় মাদরাসা শিক্ষকদের ভূমিকা আজ আগের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো: হাবিবুর রহমান বলেন, মুসলমানদের ইতিহাস, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতায় অবদান অত্যন্ত সমৃদ্ধ। সেই ঐতিহ্যকে সামনে রেখে আজকের শিক্ষার্থীদেরকে বৈশ্বিক অঙ্গনে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে নিতে হবে। কোরআন–হাদীসের আলো, নৈতিক মূল্যবোধ এবং আধুনিক জ্ঞানের সমন্বয় ঘটাতে পারলেই একটি নতুন, প্রগতিশীল বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব।
তিনি মাদরাসা শিক্ষার মানোন্নয়ন ও যোগ্য শিক্ষকমণ্ডলী তৈরিতে নিয়মিত প্রশিক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।
সেমিনারের প্রধান আলোচক ছিলেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক ভিসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের সাবেক ডিন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান।
তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বে ভ্যালুস-বেইজড নলেজ জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি গবেষণার মান, অনুসন্ধিৎসু মন, সততা ও মানবিকতা—এগুলোই একজন প্রকৃত শিক্ষার্থীর পরিচয়। মাদরাসা শিক্ষার্থীরা যদি গবেষণায় মনোযোগী হয়, বৈশ্বিক জ্ঞানচর্চার সাথে নিজেদের যুক্ত করে, তবে তারা বিশ্বে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: হারুনুর রশীদ।
তিনি তার প্রবন্ধে বলেন, মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন, পাঠ্যক্রমের আধুনিকায়ন, তথ্যপ্রযুক্তি দক্ষতা, শিক্ষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, মূল্যবোধ ভিত্তিক শিক্ষা এবং শিক্ষার্থী–শিক্ষকের পারস্পরিক যোগাযোগ শক্তিশালী করার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে নেয়া সম্ভব।
তিনি বিশ্বমানের শিক্ষা বাস্তবায়নে বিএমটিটিআই–এর প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।
সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (বিএমটিটিআই) অধ্যক্ষ প্রফেসর মাহমুদুল হক।
তিনি তাঁর বক্তব্যে মাদরাসা শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি, আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতি রপ্ত করা এবং শিক্ষার্থীদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।



