সিডনি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকার গুলশান ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হলো বার্ষিক বিজ্ঞান মেলা। দিনব্যাপী আয়োজনে শিক্ষার্থীরা প্রদর্শন করে নানান অভিনব প্রকল্প, গবেষণা ও মডেল। মেলার মূল আকর্ষণ ছিল শিক্ষার্থীদের তৈরি প্রযুক্তিনির্ভর উদ্ভাবন ও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার প্রদর্শনী। উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, অভিভাবকবৃন্দ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ।
বৃহস্পতিবার সকালে স্কুল ক্যাম্পাসে মেলার উদ্বোধন করেন সিডনি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও শিক্ষানুরাগী মাইনুল মৃধা।
উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানচর্চার প্রতি আগ্রহ ও নিষ্ঠাকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আজকের এই বার্ষিক বিজ্ঞান মেলা আমাদের বিদ্যালয়ের গর্বের দিন। এ মেলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের কৌতূহল, সৃজনশীলতা এবং গবেষণামূলক চিন্তাধারার প্রকাশ ঘটিয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, বিজ্ঞান শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বাস্তব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়োগ আমাদের জীবনকে সহজ, সুন্দর এবং গতিময় করেছে। এই মেলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যে প্রকল্প ও আবিষ্কারের প্রদর্শনী করছে, তা তাদের মেধা, অধ্যবসায় এবং কল্পনাশক্তির উজ্জ্বল প্রতিফলন।
মাইনুল মৃধা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা যখন নানা ধরনের মডেল, পরীক্ষা-নিরীক্ষা কিংবা গবেষণামূলক কাজ প্রদর্শন করছো, তখন তোমাদের মধ্যে একজন নতুন বিজ্ঞানীর জন্ম হচ্ছে। হয়তো আগামী দিনে এখান থেকেই জন্ম নেবে কোনো চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষক, প্রযুক্তিবিদ কিংবা মহাকাশবিজ্ঞানী।
তিনি মনে করিয়ে দেন, বিজ্ঞানের আসল উদ্দেশ্য প্রতিযোগিতা নয়; বরং জ্ঞান ভাগাভাগি করা। তিনি বলেন, বিজ্ঞান মেলার আসল উদ্দেশ্য শুধু প্রতিযোগিতা নয়; বরং শেখার আনন্দকে ভাগাভাগি করা। তোমরা যে প্রকল্প তৈরি করছো, তা নিখুঁত না হলেও তা তোমাদের চিন্তাশক্তি ও প্রচেষ্টার প্রতিফলন। ব্যর্থতা কখনোই ভয়ের বিষয় নয়; বরং সফলতার প্রথম ধাপ।
তিনি আরো যোগ করেন, বিজ্ঞানের পথে হাঁটতে হলে প্রশ্ন করতে হবে, অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে হবে এবং নিরলস পরিশ্রম করতে হবে।
স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা মাইনুল মৃধা, শিক্ষক ও অভিভাবকদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষকবৃন্দের দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা ছাড়া শিক্ষার্থীরা এ ধরনের সৃজনশীল কাজ উপস্থাপন করতে পারত না। পাশাপাশি অভিভাবকরাই সন্তানদের স্বপ্ন দেখার সাহস জুগিয়েছেন।’
সবশেষে তিনি প্রত্যাশা প্রকাশ করেন, বিজ্ঞানের আলোই ভবিষ্যতের দিশারী। আমরা যদি এই আলোর পথ ধরে এগিয়ে যাই, তবে আমাদের সমাজ, দেশ এবং মানবজাতির অগ্রগতি নিশ্চিত হবে। আজকের এই মেলা শিক্ষার্থীদের মনে নতুন স্বপ্ন বুনবে এবং আগামী দিনের জন্য তাদের আরো উদ্দীপ্ত করবে।
মেলায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা জানায়, তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্প তৈরির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল। অনেকে তৈরি করেছে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনের মডেল, কেউ বা দেখিয়েছে সহজ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা। শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীরা দলগতভাবে অংশ নিয়ে তাদের সৃজনশীলতা তুলে ধরেছে।
দিনব্যাপী আয়োজনে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকেই জানান, এ ধরনের আয়োজন শিশু-কিশোরদের নতুন চিন্তা ও উদ্ভাবনের পথে অনুপ্রাণিত করবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এক্টিং প্রিন্সিপাল, আফরোজা সুলতানা খান, কো-অর্ডিনেটর, এস, এম মনিরুজ্জামান জুয়েল, কো-অর্ডিনেটর, আতিয়া আশরাফ, কো-অর্ডিনেটর, সিনথিয়া ইসলাম। আর বিজ্ঞান মেলার বিচারক ছিলেন বিএএফ শাহিন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অ্যান্ড কলেজের হেড অফ সাইন্স এবং ক্যামব্রিজ কো-অর্ডিনেটর মো: আমজাদ হোসেন এবং স্কলাস্টিকা স্কুলের সাবেক কেমিস্ট্রি টিচার মিস সালমা সুলতানা।