বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) অনাপত্তিপত্র উপেক্ষা করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) নিয়োগ পাওয়া ১০ জন শিক্ষক যোগদানের পর থেকেই বেতন-ভাতা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।
২০২৪ সালের মার্চ ও জুন মাসে দুটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে ৫১টি প্রভাষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ২০২৪ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এক বছরের মধ্য নিয়োগ দিতে না পারায় ইউজিসি পদগুলো ব্লক করে দেয়। পদগুলো ছাড় না করিয়েই এদিকে ২০২৫ সালের ৭ জুলাই ৫১ প্রভাষক পদের মধ্য মাত্র ১০টি প্রভাষক পদে পুন:নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে শিক্ষক নিয়োগের তোড়জোড় শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ইউজিসির অনাপত্তিপত্রের তোয়াক্কা না করে ১০ পদে পুনঃনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তড়িঘড়ি করে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু নিয়োগে ইউজিসির পর্যবেক্ষণ ও অনাপত্তিপত্র না থাকায় বেতন ভাতা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা।
ক্লাস-পরীক্ষাসহ নিয়মিত দাফতরিক কাজ করেও বেতন না পাওয়ায় চরম হতাশা ও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত এই শিক্ষকরা।
নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও বেতন জটিলতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক বলেন, ‘সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নিয়োগ পাওয়ার পর বেতন নিয়ে এমন জটিলতা সত্যিই আমাদের জন্য লজ্জাজনক। কী কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, তা আমাদের জানা নেই। এখনো নিয়োগ চূড়ান্তকরণের দাফতরিক চিঠি আসেনি। অথচ আমরা নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছি, পরীক্ষা নিচ্ছি, সব ধরনের কাজ করছি। কিন্তু এখনো আমাদের যোগদানই নিশ্চিত হলো না।’
সদ্য নিয়োগ পাওয়া মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের প্রভাষক ইশরাত জাহান রিকজা বলেন, ‘গত মাসের ১৯ তারিখে আমি জয়েন করেছি, এখনো বেতন হয়নি। আমি বিস্তারিত জানি না তবে যতটুকু জেনেছি ইউজিসি অনাপত্তি জানিয়েছে আমাদের নিয়োগকে কেন্দ্র করে। ভাইস চ্যান্সেলরের (ভিসি) সাথে দেখা করার জন্য আমরা চেষ্টা করতেছিলাম।কিন্তু স্যার অনেক ব্যাস্ত থাকায় দেখা করতে পারিনি। তবে আমরা আশা করছি দ্রুতই একটা সমাধান আসবে।’
গণিত বিভাগের আরেক প্রভাষক মো: সজিবর কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সঠিক করে বলতে পারছি না তবে আমি যতটুকু শুনলাম আগামী মাস থেকে আমরা বেতন পেয়ে যাবো। জয়েন করার পরেও যে একসেপ্টেড চিঠিটা এখনো ওনাদের কাছে যায়নি এজন্য ওনারা এ কাজটি করতে পারেনি। এজন্য এই সমস্যাটা তৈরি হচ্ছে।
অর্থ দফতরের উপ-পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) মো: আতিকুর রহমান বলেন, ‘এবিষয়ে আমরা জানি না, এসব বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন। আমাদের কাছে বেতন সংক্রান্ত এখনো কোনো চিঠি আসেনি। যোগদানপত্র কার্যকর হলে আমাদের কাছে চিঠি আসলে আমরা আমাদের কার্যক্রম করবো।’
এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার(ভারপ্রাপ্ত) খান সানজিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমি শুনছি তাদের বেতন এখন পর্যন্ত হয় নাই। ইউজিসির অনা অনাপত্তি পর্যবেক্ষণ রিপোর্টের জন্য তাদের বেতন আটকে আছে। আর এবিষয়ে আমার কাছে কোনো নির্দেশনা আসে নাই।’
ভিসি অধ্যাপক ড. তৌফিক আলম বলেন, ‘একটু টেকনিক্যাল সমস্যা ছিল। আমরা কাজ করছি। খুব শীঘ্রই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান এ বিষয়ে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়কে এ সংক্রান্ত জটিলতা দূর করে দ্রুত চিঠি দেয়া হবে।’
বাকি ৪১ পদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে অনাপত্তিপত্র দেয়া হবে কিনা সে বিষয়ে বলেন, ‘এবিষয়ে পরবর্তীতে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেবে ইউজিসি।’



