উত্তাল রাবি

রাকসুর কার্যালয় ভাঙচুর, মুখোমুখি শিক্ষার্থী-ছাত্রদল

নির্বাচন কমিশন অফিসে ভাঙচুর করে তালা লাগিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। এ সময় শিক্ষার্থীরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে গেলে শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়েন। পড়ে উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে।

রাবি প্রতিনিধি

Location :

Rajshahi
রাকসু নিয়ে উত্তাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাকসু নিয়ে উত্তাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় |নয়া দিগন্ত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ভোটার তালিকায় প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে নির্বাচন কমিশন অফিসে ভাঙচুর করে তালা লাগিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। এ সময় শিক্ষার্থীরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে গেলে শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়েন। পড়ে উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে।

রোববার (৩১ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, রোববার দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে নথিপত্র ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে শাখা ছাত্রদল। একইসাথে ভাঙচুর করা হয় অফিসের চেয়ার-টেবিল। পরে নির্বাচন কমিশন অফিসে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান শুরু করে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহীর নেতৃত্বে রাকসু নির্বাচনের সকল কার্যক্রম এভাবে ভেস্তে দেয়া হয়।

এদিকে ওই সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে গেলে শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়েন। পরবর্তী সময়ে রাকসু কোষাধ্যক্ষের কার্যালয় ভাঙচুর ও মনোনয়ন ফরম বিতরণ বন্ধের প্রতিবাদে জড়ো হতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

পরে দুপুর ১২টার দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে ছাত্রদলের মুখোমুখি অবস্থান নেন। দীর্ঘ সময় ধরে সাধারণ শিক্ষার্থী ও সমন্বয়কদের সাথে ছাত্রদলের মুখোমুখি অবস্থান উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। অন্যদিকে বহিরাগত ছাত্রদল-যুবদলের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং পরিস্থিতি খারাপের দিকে মোড় নেয়। পরে শিক্ষার্থীরা কার্যালয়ের তালা ভাঙতে গেলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বাধা দেন। ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের রাকসু কার্যালয়ের তালা খোলার জন্য ১০ মিনিটের আল্টিমেটাম দেন। কিন্তু তারা তাতে কর্ণপাত না করায় শিক্ষার্থীরা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিয়ে তালা ভেঙে কার্যালয়ে প্রবেশ করেন।

ছাত্রদলের দেয়া তালা ভেঙে শিক্ষার্থীরা রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে প্রবেশ করার পর অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। দুপুর ২টার দিকে নির্বাচন কমিশন মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে। শেষ দিনে মনোনয়ন ফরম নেন ছাত্রশিবিরের প্যানেল, সাধারণ শিক্ষার্থী ও সাবেক সমন্বয়করা।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সরদার জহুরুল বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবি মানছে না। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা রাকসুর ফি দিয়েছে তবু তারা ভোটার হতে পারছে না। আমরা এ বৈষম্য নিরসন করেই কর্মসূচি শেষ করব।’

এ বিষয়ে রাকসুর কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. সেতাউর রহমান বলেন, ‘মনোনয়নপত্র বিতরণের কাজ পুনরায় শুরু হয়েছে। যারা মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করতে চান তাদের আজই ফরম সংগ্রহ করতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান জানান, ‘আমরা উভয়পক্ষকেই বলেছি তারা যেন সহনশীল থেকে কর্মসূচি পালন করে। আমরা আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি সমাধানের চেষ্টা করছি।’

এদিকে নির্বাচন কমিশনের আয়োজনে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সিনেট ভবনে সকল ছাত্র সংগঠন এবং রাকসুর মনোনয়ন উত্তোলনকারীদের নিয়ে জরুরি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

তবে সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্রসংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশ নিলেও রাবি শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সভাটি বর্জন করেন। তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে কমিশনের মতবিনিময় সভা বর্জন করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের নেতাকর্মীরাও।

বর্জন শেষে ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ‘আমরা রাকসু নির্বাচন কমিশন আয়োজিত এ মতবিনিময় সভা বয়কট করেছি। আমরা প্রশাসনের ডাকে এখানে এসেছিলাম। কিন্তু এসে দেখি, রাকসু নির্বাচন কমিশনের সভায় কথা বলার মতো সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও রাকসু নির্বাচন কমিশনের নির্দেশেই আজ ছাত্রদলের ওপর হামলা হয়েছে। তাই আমরা পাকিস্তানি প্রশাসনের প্রতিনিধি ভিসি সালেহ হাসান নকীবের মতবিনিময় সভায় থাকব না।’

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্রসংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের আজকের মতবিনিময় সভায় আহ্বান জানিয়েছিলাম। এখন কেউ যদি আমাদের সভা বয়কট করে, সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।’