শাকসুর তফসিল হলেও নেই আমেজ, নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা

তফসিলের পর কমিশন প্রস্তুতি শুরু করলেও দিনটি দীর্ঘ ছুটির মধ্যে হওয়ায় শিক্ষার্থীদের বড় অংশই উপস্থিত থাকতে পারবেন কি না তা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে।

হোসাইন ইকবাল, শাবিপ্রবি

Location :

Sylhet
নয়া দিগন্ত

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (শাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু ভোটের তারিখ নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর তীব্র মতবিরোধে ক্যাম্পাসে এখনো নির্বাচনী আমেজ তৈরি হয়নি।

নির্বাচন কমিশন ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১৭ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের কথা। তফসিলের পর কমিশন প্রস্তুতি শুরু করলেও দিনটি দীর্ঘ ছুটির মধ্যে হওয়ায় শিক্ষার্থীদের বড় অংশই উপস্থিত থাকতে পারবেন কি না তা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে।

এর আগে ১৩ নভেম্বর রাতে শিক্ষার্থীদের একাংশ ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করার দাবিতে ভিসির বাসভবন ঘেরাও করেন। পরের দিন ভিসি ১৭ ডিসেম্বর নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিলে আন্দোলনকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করে আবারো আন্দোলন শুরু করেন। পরে তাদের সাথে যোগ দেয় ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র মজলিস ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।

অন্যদিকে ছাত্রদল নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নেয়ার দাবি জানায় এবং পরবর্তী সময়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘সহিংস সন্ত্রাসবাদী’ আখ্যা দিয়ে চার দফা দাবিতে ভিসিকে স্মারকলিপিও দিয়েছে সংগঠনটি।

শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখন মূলত দুটি অবস্থান স্পষ্ট। ছাত্রদল নির্বাচন পেছানোর পক্ষে আর ছাত্রশিবিরসহ সমমনাদের দাবি ছুটির আগেই অর্থাৎ ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট আয়োজনের। এ দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে নির্বাচনের ভবিষ্যৎও এখন অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডার বলছে, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ধারাবাহিক ছুটি রয়েছে। ১২-১৩ ডিসেম্বর সাপ্তাহিক ছুটি, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস, এরপর আবার সাপ্তাহিক ছুটি। এ সময়ের মধ্যে মাত্র তিন দিন—১১, ১৫ ও ১৭ ডিসেম্বর ক্যাম্পাস খোলা। এর মাঝে ১৭ ডিসেম্বরেই ভোটের তারিখ রাখায় ভোটার উপস্থিতি স্বাভাবিকভাবে প্রশ্নের মুখে পড়ছে। প্রশাসন ছুটি এগিয়ে আনার একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তা প্রত্যাহার করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মাসুদ রানা তুহিন নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীরা ১০ ডিসেম্বরের পর ছুটিতে বাড়ি চলে যাবে। তাই ১৭ ডিসেম্বর নির্বাচন হলে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা থেকে যায়। এ জন্য আমরা চাই নির্বাচন ১০ ডিসেম্বরের মধ্যেই হোক যাতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত থাকে।’

শাখা ছাত্রদলের সভাপতি রাহাত জামান নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘আমরা শীতকালীন ছুটির পর যেকোনো দিন নির্বাচন চাই। কারণ সব শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে সময় প্রয়োজন। এছাড়া ডিসেম্বরের ১০ তারিখের মধ্যে নির্বাচন যৌক্তিক নয়, কারণ এ সময় অনেক বিভাগের ফিল্ড ওয়ার্ক ও ল্যাব থাকবে যা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করবে না।’

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনারের মুখপাত্র মো: নজরুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা বা পরিবর্তনের এখতিয়ার সভাপতি/ভিসির আছে। তিনি তারিখ ঘোষণার পর আমরা তফসিল ঘোষণা করেছি। আমরা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে মতপার্থক্য বা অসন্তুষ্টি রয়েছে এটা আমাদের জন্য অস্বস্তির জায়গা। আমরা চাই সব পক্ষকে সাথে নিয়ে উৎসবমুখর একটা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। ১৭ তারিখের নির্বাচনে যদি তাদের মধ্যে অসন্তুষ্টি থাকে, সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন হয়ত সিদ্ধান্ত নেবে কী করবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তুষ্টি অথবা মতবিরোধ নিয়ে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করবে কি না বা করতে পারবে কি না সেই বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নির্বাচনের তারিখ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে প্রশাসনকে ডিল করতে হবে।’

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত ভিসি অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ১৭ তারিখ নির্বাচন বয়কট ঘোষণা করেছে কিন্তু নির্বাচন কমিশন ১৭ তারিখের আগে নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না বলে আমাদের জানিয়েছিল। এর আগে শিক্ষার্থীরা আমাদের জানিয়েছিল তারা লাস্ট ১৩ তারিখ নির্বাচন করতে রাজি। যেহেতু শিক্ষার্থীরা ১৭ তারিখ নির্বাচন করবে না বলছে এবং ভিসি আবার অনেকের সাথে বসবেন, সবমিলিয়ে আমার কাছে মনে হচ্ছে ১৭ তারিখ নির্বাচন কিভাবে করবে। তারপরেও ভিসি আমাকে শিক্ষার্থীদের সাথে আবার বসার জন্য দায়িত্ব দিয়ে গেছেন, আমি শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে আবার বসব।'