গণঅভ্যুত্থান নিয়ে জাতিসঙ্ঘের তদন্ত প্রতিবেদন ও সুপারিশের ওপর শাবিপ্রবিতে সেমিনার

ইউএন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংস রিপোর্টে আমরা বাংলাদেশ সরকারকে মোট ৪৩টি সুপারিশ করেছি। পহেলা জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত যা ঘটেছে, জাতিসঙ্ঘ সেটিকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

হোসাইন ইকবাল, শাবিপ্রবি

Location :

Sylhet
জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে জাতিসঙ্ঘের তদন্ত প্রতিবেদন ও সুপারিশের ওপর সেমিনার
জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে জাতিসঙ্ঘের তদন্ত প্রতিবেদন ও সুপারিশের ওপর সেমিনার |নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশের জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে জাতিসঙ্ঘের করা তদন্ত প্রতিবেদন ও সুপারিশের ওপর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বেলা ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মিনি অডিটোরিয়ামে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানের আয়োজন করে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) এবং সহযোগিতায় ছিল ইউএন রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটরস অফিস (ইউএনআরসিও)।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ইসমাইল হোসেন, রাজনৈতিক অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. সাহাবুল হক ও অধ্যাপক ড. দিলারা রহমান।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতিসঙ্ঘের হিউম্যান রাইটস অফিসার জাহিদুল হোসেন।

তিনি বলেন, ‘ইউএন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংস রিপোর্টে আমরা বাংলাদেশ সরকারকে মোট ৪৩টি সুপারিশ করেছি। পহেলা জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত যা ঘটেছে, জাতিসঙ্ঘ সেটিকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। জাতিসঙ্ঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট আকাশ থেকে পড়েনি—বাংলাদেশে যা ঘটেছে সেটিই এখানে প্রতিফলিত হয়েছে। এ সুপারিশগুলো সবার পড়া উচিত।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এ আয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়ে করছি কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই রাষ্ট্রের মস্তিষ্ক। রাষ্ট্র হলো শরীর আর ছাত্ররা দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশের দুই ধরনের অপরাধ আছে— দেওয়ানি ও ফৌজদারি। ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির সঙ্ঘাত মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, কিন্তু রাষ্ট্র যখন জনগণের ওপর দমন-পীড়ন চালায় তখনই মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটে। রাষ্ট্র যদি কোনো সিস্টেমকে দমন বা হরণ করে তখন তা মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হেলমেটবাহিনী যে সহিংসতা ঘটিয়েছে তা ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়; কারণ রাষ্ট্র তাদের সহযোগিতা দিয়েছে।’

অনুষ্ঠানে জুলাই বিপ্লবে শহীদ নয়া দিগন্তের সিলেট ব্যুরো প্রধান তুরাবের বড় ভাই উপস্থিত থেকে স্মৃতিচারণ ও বক্তব্য রাখেন।

প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অল্প কয়েকজন শিক্ষার্থী জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিরোধিতা করেছিল। আন্দোলনের সময় সমন্বয়কারীরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শাবিপ্রবির ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য, যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও উঠে এসেছে।’

ভিসি অধ্যাপক ড. সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে এক অদ্ভুত ধরনের সরকারের বিরুদ্ধে এ বিপ্লব হয়েছিল—আয়নাঘর সরকার ও রাতের ভোটের সরকার। যারা এ সরকারের পতনে ভূমিকা রেখেছেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। জুলাই চেতনা ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। শেখ হাসিনার ভুয়া ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে বেরিয়ে এসে সত্যিকার জনগণের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।’

সেমিনার শেষে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে জাতিসঙ্ঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্টভিত্তিক প্রকাশনা, মানবাধিকারসংক্রান্ত বই, নীতিমালা ও স্মারক টি-শার্ট বিতরণ করা হয়।