আওয়ামী শাসনামলে গুম হওয়া ২ শিক্ষার্থীর সন্ধানে ইবি ছাত্রশিবিরের মানববন্ধন

গুমের পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুমের খবর অস্বীকার করে। তবে সম্প্রতি জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের গুমের শিকার ৭৬ জনের একটি তালিকায় রয়েছেন এ ওয়ালিউল্লাহ ও আল-মুকাদ্দাস।

তাজমুল জায়িম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

Location :

Kushtia
গুম হওয়া ২ শিক্ষার্থীর সন্ধানে ছাত্রশিবিরের মানববন্ধন
গুম হওয়া ২ শিক্ষার্থীর সন্ধানে ছাত্রশিবিরের মানববন্ধন |নয়া দিগন্ত

তাজমুল জায়িম, ইবি

আওয়ামী শাসনামলে গুম হওয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী ওয়ালিউল্লাহ ও আল- মুকাদ্দাসের সন্ধানের দাবিতে মানববন্ধন করেছে শাখা ছাত্রশিবির। এ সময় ওই দুই শিক্ষার্থীর সন্ধান ও সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সাজিদ আব্দুল্লাহর হত্যার বিচারের দাবি জানান তারা।

শনিবার (৩০ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এ মানববন্ধন করেন নেতাকর্মীরা।

মানববন্ধনে শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান, সেক্রেটারি ইউসুব আলী ও ওয়ালিউল্লাহর বড় ভাই অধ্যক্ষ খালিদ সাইফুল্লাহসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

গুমের শিকার ওয়ালিউল্লাহর বড় ভাই অধ্যক্ষ খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘আমি ওয়ালি-মুকাদ্দাস দু’জনেরই বড় ভাই হিসেবে বলব, আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয় আসি তখন আমার পা চলে না, বুক কেঁপে উঠে, ক্যাম্পাসে আসার সময় আমি বাবা-মাকে বলে আসতে পারি না যে আমি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় যাচ্ছি। কেউ যদি দোষীও হয় পদ্ধতিগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার বিচার হোক শাস্তি পাক কিন্তু এ ধরনের গুম-হত্যা একটি দেশের বড় হওয়া ও সমৃদ্ধ হওয়াকে থামিয়ে দেয়।’

তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাই তৎকালীন প্রশাসনে যারা ছিল তাদের সহযোগিতা ছাড়া এ ধরনের কাজ কখনোই সম্ভব ছিল না। আমি এবং মুকাদ্দাসের চাচা গুমের বিষয়ে তদবির করেছিলাম মিডিয়ার ঘরে ঘরে গিয়েছিলাম ও প্রশাসনের ঘরে ঘরে গিয়েছিলাম। সেই সময় আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, তৎকালীন এখানকার স্থানীয় প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যোগসাজশেই ওয়ালিউল্লাহ-মুকাদ্দাসের গতিবিধি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছিল।’

শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, আজকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ পতনের একটি বছর হয়ে গেল। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা ওয়ালিউল্লাহ ও আল মুকাদ্দাস ভাইয়ের সন্ধান পাইনি। সরকার গুম কমিশন তৈরি করলেও সেটার কার্যকরী পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাইনি। আমার মনে হয় এ সরকার ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে ফ্যাসিবাদকে আশ্রয় দিচ্ছে। যেটা প্রতীয়মান হয়েছে গতকালকে নূরের উপর হামলার মাধ্যমে। যদি উপদেষ্টারা পদত্যাগ করেন তবে আপনারাও গুমের শিকার হতে পারেন। তাই আপনাদের অনুরোধ জানাই আমাদের ভাইদের সন্ধান দিন।’

তিনি আরো বলেন, ‘তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের ধরুন। তাহলে আমার মনে হয় অনেক কিছু বের হয়ে যাবে। আপনারা কেন ধরছেন না? কেন কুলুপ আটা আপনাদের মুখে? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর দায় এড়াতে পারে না। প্রশাসনকে বলতে চাই ওয়ালিউল্লাহ ও আল মুকাদ্দাস ভাইয়ের ব্যাপারে দ্রুত কথা বলুন। নইলে বিশ্ববিদ্যালয়কে অচল করে দেয়া হবে। প্রশাসনে এখনো অনেক ফ্যাসিবাদের দোসর আছে। সরকারকে বলছি প্রশাসনকে ঢেলে সাজান, আর যেন কোনো মা-বাবাকে তাদের সন্তানদের হারাতে না হয়। সেই ব্যাপারে এখনি পদক্ষেপ নিন।’

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা থেকে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে কুষ্টিয়া ফিরছিলেন ওয়ালীউল্লাহ ও মুকাদ্দাস। পথিমধ্যে ঢাকা নবীনগর এলাকা থেকে র‌্যাব ও ডিবি পরিচয়ে উঠিয়ে নেয়া হয় তাদের। এরপর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ওয়ালীউল্লাহ ছাত্রশিবির ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তৎকালীন অর্থ সম্পাদক এবং মুকাদ্দাস সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তী সময়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুমের খবর অস্বীকার করে। তবে সম্প্রতি জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের গুমের শিকার ৭৬ জনের একটি তালিকায় রয়েছেন এ ওয়ালিউল্লাহ ও আল-মুকাদ্দাস।