ভিসি আমানুল্লাহ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে সেন্টার অব এক্সিলেন্সে রূপান্তর সময়ের দাবি

‘দেশের মোট উচ্চশিক্ষার প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর দায়িত্ব বহনকারী এই বিশ্ববিদ্যালয়কে শক্তিশালী না করে উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি গঠন সম্ভব নয়।’

মো: আজিজুল হক, গাজীপুর মহানগর

Location :

Gazipur
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আমানুল্লাহ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আমানুল্লাহ |নয়া দিগন্ত

দেশের উচ্চশিক্ষায় বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক ও সুষম সমাজ গঠনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পূর্ণাঙ্গ সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বলেছেন, ‘দেশের মোট উচ্চশিক্ষার প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর দায়িত্ব বহনকারী এই বিশ্ববিদ্যালয়কে শক্তিশালী না করে উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি গঠন সম্ভব নয়।’

শনিবার (২০ ডিসেম্বর) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত বিশেষ সিনেট অধিবেশনে সিনেট চেয়ারম্যানের অভিভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

ভাইস-চ্যান্সেলর বলেন, সারাদেশের প্রায় আড়াই হাজার সরকারি-বেসরকারি কলেজ ও প্রফেশনাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ ৩৩ বছর অতিক্রান্ত হলেও কাঙ্ক্ষিত মান ও সক্ষমতায় পৌঁছাতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি, যা দেশের উচ্চশিক্ষার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর সৃষ্ট পরিবর্তনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন একে সমাজ বিনির্মাণকারী ও দক্ষ মানবসম্পদ উৎপাদনকারী আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে ব্যাপক সংস্কারমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে দেশের উচ্চশিক্ষায় গুণগত পরিবর্তন আসবে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য কর্মসংস্থানের নতুন দুয়ার খুলবে।

ভিসি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে তথ্যপ্রযুক্তি ও বহুভাষিক দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে স্নাতক, স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সিলেবাস সংস্কার করা হয়েছে এবং আইসিটি ও ইংরেজি বিষয় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ও ডেটা সায়েন্স বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে ৫০ হাজার ছাত্রীকে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। পরবর্তী পর্যায়ে ছাত্রদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।

এ লক্ষে দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, অধিভুক্ত কলেজগুলোতে ক্যারিয়ার ক্লাব গঠন এবং বিভিন্ন ইনস্টিটিউট ও ল্যাব স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে।

তিনি জানান, এরইমধ্যে ভার্চুয়াল লার্নিং সেন্টার, ইনস্টিটিউট অব ফরেনসিক সায়েন্স অ্যান্ড সাইবার সিকিউরিটি, আন্তর্জাতিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউট অব মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম, ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন্সিং অ্যান্ড জিআইএস প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এছাড়া ব্রিটেনের স্যালফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যৌথভাবে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি–স্যালফোর্ড সেন্টার অব এক্সেলেন্স ফর এমার্জিং টেকনোলজিস চালু করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীনে ৩১টি বিষয়ে পিএইচডি ও এমফিল প্রোগ্রাম, মাস্টার ইন ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড পলিসি স্টাডিজ (এমডিপিএস) এবং মাস্টার অব পাবলিক হেলথ (এমপিএইচ) কোর্স প্রবর্তনের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

সমাপনী বক্তব্যে ভাইস-চ্যান্সেলর বলেন, ‘আধিপত্যবাদী সংস্কৃতিকে চ্যালেঞ্জ করে জ্ঞান, ভাষা, নিজস্ব ইতিহাস ও সংস্কৃতির বিকাশকেই উচ্চশিক্ষার মূল লক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’ তিনি এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে সরকার ও সিনেট সদস্যদের সহযোগিতা কামনা করেন।

সিনেট চেয়ারম্যানের অভিভাষণের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সিনেট সদস্যরা বিভিন্ন পরামর্শ দেন এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের সংস্কার কার্যক্রমে পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

সভায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংশোধিত গভর্নিং বডির সংবিধি অনুসমর্থন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক গ্রুপগুলোকে অনুষদে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

অধিবেশনের শুরুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় এবং প্রয়াতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

বিশেষ সিনেট অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন- প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর মো: লুৎফর রহমান ও প্রফেসর ড. মো: নূরুল ইসলাম, ট্রেজারার প্রফেসর ড. এ টি এম জাফরুল আযম, ৫৪ জন সিনেট সদস্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, রেজিস্ট্রার, শিক্ষক ও বিভিন্ন দফতরের পরিচালকগণ।

এছাড়া আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সচিব ড. মো: মোখলেস উর রহমানসহ দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানগণ।