জাবির আবাসিক হলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিপীড়নে ১৬ জনকে সাময়িক বহিষ্কার

একজন নবীন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা সবাই খুব ভয় পেয়েছিলাম। হঠাৎ রুমের দরজা বন্ধ করে লাইট অফ করা হয়, সবাইকে দুই সারিতে দাঁড় করানো হয়। কিছুক্ষণ পর কয়েকজন বড় ভাই রুমে ঢুকে লাইট অন করেন।

আতাউর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২১ নম্বর হলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়নের ঘটনায় বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ১৬ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

রোববার (১২ অক্টোবর) রাতে সংঘটিত এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (১৩ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রণীত শৃঙ্খলা সংক্রান্ত অধ্যাদেশ ২০১৮’র ধারা ৪(১)(খ) অনুযায়ী এই বহিষ্কারের আদেশ দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম রাশিদুল আলম বলেন, গতকাল রাতের ঘটনার বিষয়ে আজ সকালে সংশ্লিষ্ট হলের প্রভোস্ট রিপোর্ট জমা দেন। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই ভিসি অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছেন।

একইসাথে ঘটনাটির তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি করা হয়েছে মওলানা ভাসানী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো: কামরুজ্জামানকে, সদস্য সহকারী প্রক্টর ড. মো: আল-আমিন খান এবং সদস্য-সচিব হিসেবে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা ও বৃত্তি শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার লুৎফর রহমান আরিফ। কমিটিকে ২১ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

সাময়িকভাবে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা সবাই বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের ৫৩তম ব্যাচের (২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের)। তারা হলেন- মো: তানভীর রহমান মুন, মো: আব্দুল্লাহ আল ফাহাদ, আব্দুল্লাহ আল সাঈদ, মো: আবু তালহা রনি, রাজিব শেখ, এস. এম. মাহামুদুন্নবী, মো: আবু সাঈদ, জান্নাতুল আদন, আহমেদ আরেফিন রাতুল, তাসনিমুল হাসান জুবায়ের, মো: মাহামুদুল হাসান ফুয়াদ, মো: আল হাসিব, মো: আব্দুল্লাহ আল নোমান, মো: রাকিবুল হাসান নিবিড়, মো: জাহিদুল ইসলাম ও উশান্ত ত্রিপুরা।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থীর সংসদের (জাকসু) জিএস মাজহারুল ইসলাম বলেন, প্রত্যক্ষ ও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে র‍্যাগিংয়ের সাথে জড়িত কাউকে প্রশয় দেয়া হবে না। আমাদের এই অপসংস্কৃতি থেকে বের হতে হবে। পুরনো দিনের মতো পরিচয় পর্বের নামে রানিংয়ের কালচার থেকে সবাইকে বের হয়ে জুনিয়রদের সাথে স্নেহপূর্ণ ও শোভাপূর্ণ উপায়ে সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে।

এর আগে গত রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ নম্বর হলের ৪০৩ নম্বর কক্ষে প্রথম বর্ষের (৫৪তম ব্যাচের) শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়নের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের বরাতে জানা যায়, নবীন শিক্ষার্থীদের প্রথমে রফিক-জব্বার চত্বরে ডাকা হয়, পরে তাদের ৪০৩ নম্বর রুমে নেয়া হয়। সেখানে তাদের দুই সারিতে দাঁড় করিয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করতে বলা হয় এবং রুমের দরজা-জানালা বন্ধ করে আলো নিভিয়ে দেয়া হয়। প্রায় ১৫–২০ মিনিট অন্ধকার কক্ষে দাঁড় করিয়ে রেখে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়।

একজন নবীন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা সবাই খুব ভয় পেয়েছিলাম। হঠাৎ রুমের দরজা বন্ধ করে লাইট অফ করা হয়, সবাইকে দুই সারিতে দাঁড় করানো হয়। কিছুক্ষণ পর কয়েকজন বড় ভাই রুমে ঢুকে লাইট অন করেন।