১২ দিন পর খুলেছে মাইলস্টোন কলেজ, কাল থেকে কাউন্সেলিং

অধিকাংশ অভিভাবক চাচ্ছেন, শিক্ষার্থীরা যেন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তাদের মতে, শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে এলে শিক্ষার্থীরা দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ |ইন্টারনেট

উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনার ১২ দিন বন্ধ থাকার পর আজ রোববার থেকে সীমিত পরিসরে খুলেছে। তবে এদিন কোনো পাঠদান বা পরীক্ষা হয়নি। আগামীকাল সোমবার থেকে শুরু হবে কাউন্সেলিং।

এদিকে আজ বেলা ১১টার দিকে প্রতিষ্ঠানটিতে নিহতদের স্মরণে একটি স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল হয়েছে।

যেখানে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং হতাহতদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল গণমাধ্যমকে জানান, এদিনে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক দিক বিবেচনা করে আরো কিছু কর্মসূচি পালিত হবে।

এছাড়া আগামী বুধবার থেকে সীমিত পরিসরে ক্লাস শুরু করা হবে। একই সাথে পরবর্তী তিন মাস শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থার উন্নয়নে কাউন্সেলিং কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। অভিভাবকদের সাথে আলাপ করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।

কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলম বলেন, আগামী বুধবার (৬ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর পরবর্তী অবস্থা বিবেচনায় বাকি ক্লাসগুলো চালুর পদক্ষেপ নেয়া হবে। ঘটনার ভয়াবহতা কাটিয়ে শিক্ষার্থীদের ধীরে ধীরে শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনতে আমরা ধাপে ধাপে কাজ করছি। এখনো আমরা নিয়মিত ক্লাস শুরুর অবস্থায় যাইনি।

তিনি বলেন, আগামীকাল ক্লাস থাকলেও তা হবে মূলত কাউন্সেলিংভিত্তিক। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলবেন, তাদের মানসিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করবেন। কেউ যদি এখনো মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকে বা আতঙ্কে থাকে, তাহলে আমরা তাকে ব্যক্তিগত কাউন্সেলিংয়ে নিয়ে যাব।

অধ্যক্ষ বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির সুযোগ দিচ্ছি। শিক্ষকদের নির্দেশনা অনুযায়ী, আগামীকাল আনুষ্ঠানিক ক্লাস নয়, বরং শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করার একটি ধাপ হিসেবেই দিনটি কাজ করবে। এছাড়া কালকে (৪ আগস্ট) আমাদের একটি পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষা রয়েছে। অধিকাংশ অভিভাবক চাচ্ছেন, শিক্ষার্থীরা যেন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তাদের মতে, শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে এলে শিক্ষার্থীরা দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে। গত এক সপ্তাহ ধরে আমরা অভিভাবকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে এই সিদ্ধান্তে নিয়েছি।

তিনি বলেন, আমরা জানি, এই মুহূর্তে আমাদের পরিবারটি (মাইলস্টোন কলেজ) আহত এবং আমরা সবাই মানসিকভাবে কষ্টে আছি। আমরা সবার প্রতি কৃতজ্ঞ, যারা এই কঠিন সময়ে আমাদের পাশে থেকেছেন।

জিয়াউল আলম বলেন, আমরা তাদের প্রত্যেকের নাম, পরিচয় ও ছবি যাচাই-বাছাই করে সংগ্রহ করেছি এবং আমাদের কলেজের ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটে একটি অফিসিয়াল তালিকা প্রকাশ করেছি। যারা এই সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্ত ছিলেন বা বিভিন্ন গুজব শুনছিলেন, আশা করি এই তালিকা তাদের প্রশ্নের উত্তর দেবে। আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মচারী এবং অভিভাবকদের নিয়ে গঠিত এই পরিবারে যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের সবাইকেই আমরা কলেজের অংশ হিসেবেই মনে করি। তবে এর বাইরেও কেউ কেউ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন যেমন- বিমানের পাইলট বা পথচারী কেউ কেউ। তবে তাদের পরিচয় এবং কলেজের সাথে সরাসরি সম্পর্ক না থাকায়, আমরা তাদের কলেজের ক্ষয়ক্ষতির আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যানে রাখিনি।

এই মুহূর্তে কোনো শিক্ষার্থী মিসিং (নিখোঁজ) নেই উল্লেখ করে অধ্যক্ষ বলেন, আপনারা যেভাবে আমাদের পাশে ছিলেন, যে সহানুভূতি ও সহযোগিতা দেখিয়েছেন, তার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। আমরা শুধু এটুকুই চাই এই কঠিন সময়ে সবাই যেন ধৈর্য ও সহমর্মিতার সাথে এগিয়ে আসেন এবং গুজব কিংবা অযাচিত আলোচনার বদলে বাস্তব সত্যের ওপর ভিত্তি করেই মূল্যায়ন করেন। এই মুহূর্তে আমাদের কোনো শিক্ষার্থী নিখোঁজ নেই।