ভিসি ড. মুহাম্মদ মাসুদকে অপসারণের দাবিতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) চলমান ছাত্রআন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে আমরণ অনশন, ক্লাস বর্জন, বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে ফুঁসে উঠেছে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) দিনভর আন্দোলন করছেন এসব শিক্ষার্থীরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়-
কুয়েট শিক্ষার্থীদের সাথে একমত পোষণ করে অনশন শুরু করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আট শিক্ষার্থী। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাশে মহুয়া মঞ্চে ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ’ ব্যানারে এ কর্মসূচি শুরু করেন তারা। পরে দুপুরের মধ্যে কুয়েট ভিসিকে অপসারণ না করা হলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে আমরণ অনশন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, ‘কুয়েটের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ ৪৮ ঘণ্টা ধরে অনশনে আছেন। ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এ সরকার নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে। ইতোমধ্যে শিক্ষা উপদেষ্টা তাদের সাথে সাক্ষাৎ করলেও কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি। একইসাথে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না তারা।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বেন আমাদের মেধাবী প্রজন্ম। কুয়েটে কোনো শিক্ষার্থীর মৃত্যু হলে এ দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারকে নিতে হবে। আমরা মনে করি, কুয়েটের ভিসি খুনি হাসিনার মতো তার ক্ষমতা আকড়ে ধরে রাখতে চায়।‘
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়-
কুয়েট ভিসির পদত্যাগের দাবিতে অনশনে বসেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সমন্বয়ক এস এস সুইট। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে অনশনে বসেন তিনি। এ সময় তার সাথে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে সুইট বলেন, ‘কুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসীদের হামলার শাস্তি নিশ্চিত না করে প্রশাসন দ্বারা শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের মাধ্যমে কুয়েট ভিসি তার পদে থাকার নৈতিক যোগ্যতা হারিয়েছে। তারপর লম্বা সময় পেরিয়ে গেলেও এর সুরাহা করতে ব্যার্থ হয়েছে কুয়েট প্রশাসন। ভিসির পদত্যাগ না করা পর্যন্ত কুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে আছি।’
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-
এদিকে কুয়েট ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) এক শিক্ষার্থী।
বোরহান আহমেদ রাকিব নামের ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সম্মুখে অনশনে বসেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘কুয়েট ভিসিকে যতক্ষণ না অপসারণ করা হবে ততক্ষণ আমিও অনশন চালিয়ে যাব।’
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-
টাঙ্গাইলে একই দাবিতে সংহতি প্রকাশ করে ক্লাস বর্জন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা।
সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় একাডেমিক ভবনের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গেটের সামনে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশে তারা কুয়েটের চলমান আন্দোলনকে ‘ন্যায়সঙ্গত’ ও ‘সময়োপযোগী’ উল্লেখ করে বলেন, ‘যেখানে শিক্ষার্থীদের কথা গুরুত্ব পাচ্ছে না, সেখানে ঐক্যই হলো আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। অনশনরত শিক্ষার্থীদের জীবন ঝুঁকিতে থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনের নিরবতা অত্যন্ত নিন্দনীয়।‘
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-
একই দাবিতে বিক্ষোভ করেছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চ। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বরে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা কুয়েটে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এর মধ্যে ‘কুয়েট ভিসি চায় কী? দালালি আর গোলামী’, ‘দালালি আর করিস না, পিঠের চামড়া থাকবে না’, ‘দফা এক দাবি এক, কুয়েট ভিসির পদত্যাগ।’
এ সময় ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ইরফান বিন হাবিব বলেন, ‘ড. মাসুদের নেতৃত্বে কুয়েট প্রশাসন পুরোপুরি স্বৈরাচারী আচরণ করছে। ছাত্র রাজনীতির নামে একটি পক্ষকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে বাকিদের দমন করার চেষ্টা চলছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এমন পক্ষপাতদুষ্ট, দমনমূলক প্রশাসনের নেতৃত্বে একজন ভিসির আর কুয়েট ক্যাম্পাসে থাকার কোনো অধিকার নেই। তিনি শিক্ষার্থীদের আস্থার জায়গা হারিয়েছেন। তার অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।’
এদিকে শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার শিক্ষার্থীদের সাথে মোবাইলফোনে কথা বলেছেন। একইসাথে অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, ‘সরকার শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে অবগত এবং একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল দ্রুত কুয়েট গিয়ে বিষয়টি পর্যালোচনা করবে।
উল্লেখ্য, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদল-যুবদলের সাথে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত হন। এ ঘটনার পর ২৫ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম ও হল বন্ধ ঘোষণা করে কুয়েট কর্তৃপক্ষ। এদিকে কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৩ এপ্রিল বন্ধ থাকা কুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে তালা ভেঙ্গে হলে হলে ঢুকেন শিক্ষার্থীরা। এরপর থেকে তারা ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।
সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে অনশনে বসেন কুয়েট শিক্ষার্থীরা। ৪৮ ঘণ্টা ধরে চলা এ আমরণ অনশনে গতকাল অসুস্থ হয়ে পড়েন চার শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে দু’জনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। অপর দু’জনকে অভিভাবকরা বাড়িতে নিয়ে গেছেন। প্রচণ্ড গরমে (অনুভূত তাপমাত্রা প্রায় ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।