খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ভিসি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ এবং প্রো-ভিসির অব্যাহতির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এই ঘোষণা পেয়ে ৫৭ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙে আনন্দ মিছিল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) রাতে কুয়েট জনসংযোগ কর্মকর্তা মো: মামুন অর রশিদের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে অব্যাহতির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এরপর বুধবার দিবাগত রাত ১টার পরে শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙেন।
অব্যাহতির খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের জুস পান করিয়ে অনশন ভাঙান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের বিজয় হয়েছে। সত্য কখনো হারে না! ইনকিলাব জিন্দাবাদ। ভিসির পদত্যাগ নয়, পতন হয়েছে।’
পরে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে একটি আনন্দ মিছিল বের করেন।
ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে বিরোধের জের ধরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ হয়। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনার পর ২৫ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম ও আবাসিক হলগুলো বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
তবে ১৩ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে ১৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়, যা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তোলে।
এ পরিস্থিতিতে কুয়েটের ৩২ জন শিক্ষার্থী ভিসির অপসারণের দাবিতে ২২ এপ্রিল থেকে আমরণ অনশনে বসেন।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকাল পৌনে ১০টার দিকে কুয়েট ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করতে যান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সি আর আবরার। তবে তার সাথে আলোচনার পরও আমরণ অনশন অব্যাহত রাখেন শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও ভিসির পদত্যাগের দাবি জানান।
তবে চলমান আন্দোলন ও শিক্ষার্থীদের অনশন সত্ত্বেও অধ্যাপক মাছুদ নিজে থেকে পদ ছাড়তে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, ‘সরকার চাইলে পদ ছাড়ব, নিজে থেকে নয়।’
পরে সরকারের পক্ষ থেকেই তাকে এবং প্রো-ভিসিকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
বুধবার রাতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কুয়েটের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত সঙ্কট নিরসন এবং শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার লক্ষ্যে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অনতিবিলম্বে একটি সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে এ দু’টি পদে নতুন নিয়োগ প্রদান করা হবে।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একজনকে সাময়িকভাবে ভিসির দায়িত্ব অর্পণ করা হবে। সূত্র : ইউএনবি