ন্যানোটিউব প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফুসফুস ক্যান্সার শনাক্তে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: কবির উদ্দিন সিকদার। তার নেতৃত্বে পরিচালিত এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রবন্ধটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিজ্ঞান জার্নাল ‘দ্য ন্যাচার’র সাইন্টিফিক রিপোর্টসে প্রকাশিত হয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর প্রকাশিত ‘অ্যালুমিনিয়াম-ডেরিভেট ন্যানোটিউবস ফর লাঞ্চ ক্যান্সার ডিটেকশন: এ ডিএফটি ইনকুইজিশন’ শীর্ষক এই গবেষণায় অংশ নেন অলি উর রহমান, ডি. এম. সাদুজ্জামান, সৈয়দ মেহেদী হাসান ও মুজাক্কির আমিন। গবেষণাটি সম্পন্ন হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বায়োমেডিক্যাল ফিজিক্স রিসার্চ’ দলের অধীনে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ফুসফুস ক্যান্সার একটি মরণব্যাধি যা সাধারণত দেরিতে (স্টেজ ৩ বা ৪) পর্যায়ে শনাক্ত হয়। তবে প্রাথমিক পর্যায়েই রোগটি শরীরে বাসা বাঁধার সময় শ্বাস-প্রশ্বাসে কিছু জৈব যৌগের উপস্থিতি দেখা যায়, যেগুলোর ঘনত্ব এত কম যে তা শনাক্ত করা কঠিন। এই যৌগগুলো শনাক্তে উচ্চসংবেদনশীল ন্যানোটিউব সেন্সর ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়েই ফুসফুস ক্যান্সার নির্ণয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে গবেষক দল।
গবেষণায় অ্যালুমিনিয়াম নাইট্রাইড (এআএইন) ও অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড (এআইপি) নামের দুটি ন্যানোটিউবের সাথে তিন ধরনের জৈব যৌগের পারস্পরিক ক্রিয়াকলাপ বিশ্লেষণ করা হয়। ফলাফলে দেখা যায়, অ্যালুমিনিয়াম নাইট্রাইড ন্যানোটিউব ফুসফুস ক্যান্সার শনাক্তের জন্য সবচেয়ে কার্যকর, কারণ এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল, পুনঃব্যবহারযোগ্য, পরিবেশবান্ধব এবং রাসায়নিকভাবে স্থিতিশীল।
গবেষণা দলের প্রধান অধ্যাপক ড. কবির উদ্দিন সিকদার বলেন, আমাদের এই গবেষণা ফুসফুস ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্তের নতুন দিক উন্মোচন করবে। প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা ও ল্যাব ফ্যাসিলিটি পেলে আমরা এই গবেষণাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারবো, যার মাধ্যমে শুধু ফুসফুস নয়; বরং অন্যান্য ক্যান্সারও প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
তিনি আরো আশা প্রকাশ করেন, ন্যানোম্যাটেরিয়াল ভিত্তিক এই বায়োসেন্সর প্রযুক্তি ভবিষ্যতে সহজ, দ্রুত ও নির্ভুলভাবে ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসার নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে।