জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দুই শিক্ষাবর্ষের ২০০ প্লেসধারী শিক্ষার্থীকে ‘কবি মতিউর রহমান মল্লিক মেরিট অ্যাওয়ার্ড’ দিয়েছে জবি শাখা ছাত্রশিবির। এ সময় শিক্ষার্থীদের সম্মাননা স্মারক, সার্টিফিকেট, মগ, কলমদানি, কোরআন, সিরাতগ্রন্থ, উত্তরীয়, নোটপ্যাড ও কলম উপহার দেয়া হয়।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ মাঠে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকা শিক্ষার্থীদের এ অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়।
অনুভূতি প্রকাশ করে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘যে ছেলে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ফেল করতাম, সেই ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে আজহার বিশ্ববিদ্যালয়েও চান্স পাব ভাবিনি। ছাত্রশিবির মেধাবীদের মূল্যায়ন করে। আমরা যেন আমাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারি সেটাই প্রত্যাশা করি।’
এ সময় ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিংক, জবির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবু লায়েক বলেন, ‘আমরা যখন ভর্তি হই তখন আইটির যুগ শুরু হয়। যারা ৪র্থ ও ৫ম শিল্পবিপ্লবের সাথে মানিয়ে নিতে পারবে তারা টিকে থাকতে পারবে। ছাত্রশিবির যে প্রোগ্রাম করছে তা আমাদের প্রশাসনের করা উচিত। মানুষ স্বীকৃতি পেলে আরো ভালো কাজের জন্য উদ্বুদ্ধ হয়।’
বক্তব্যে নারী হল প্রভোস্ট অধ্যাপক আঞ্জুমান আরা বলেন, ‘ছাত্রশিবিরকে আমি স্টাডি করি ডাকসু নির্বাচনের পর থেকে। মেরিট অ্যাওয়ার্ডের মতো প্রোগ্রাম ছাত্রশিবির ব্যতীত অন্য কাউকে করতে দেখিনি। আজকে আমি কোনো শোডাউন দেখি নাই। আমরা পরিবর্তন চাই। পরিবর্তনের জন্যই জুলাইয়ে এত মানুষ জীবন দিয়েছে। আশা করি সব রাজনৈতিক দল মেধাবীদের মূল্যায়ন করবে।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন বলেন, ‘আমরা যখন বাঙালি পরিচয় দিয়ে সামনে এগুতে চাই, তখন অন্য জাতি-গোষ্ঠী ভয় পেয়ে যায়। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভাগ করে দিয়েছে। তবে পূর্বে মাদরাসাগুলোতে পড়াশোনা করে বিশ্বের দরবারে তারা স্মরণীয় হয়ে ছিল। ১৯৪৭ সালে আমরা দেশ স্বাধীন করলেও প্রকৃত ফল আমরা ভোগ করতে পারিনি। ২৪-এর পর যদি আমাদের স্বপ্নের জায়গায় না যেতে পারি তবে ২৪ও ব্যর্থ হবে। আমি এমন একটি সমাজ প্রত্যাশা করি যেখানে সমাজে মেধাবীদের কথা শুনবে।’
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মতিউর রহমান মল্লিক সুস্থ সাংস্কৃতিক পরিবেশ তৈরি করতে চেয়েছিলেন। আজ আমাদের এ অবস্থান নিয়ে অহংকার করা যাবে না। অহংকার মানুষকে পতনের দিকে নিয়ে যায়। এ সফলতার পেছনে মা-বাবা, পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও শিক্ষকসহ অনেকের সাপোর্ট রয়েছে। আপনাদের কাছে আমার বার্তা হলো, আপনারা সৎ থাকবেন। নিজেদের সৎ, দেশপ্রেমিক ও দক্ষতাসম্পন্ন হিসেবে গড়ে তুলবেন।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জবি ভিসি রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদের বিগত ১৭ বছর মুসলিম পরিচয় দিতে হীনমন্যতায় থাকতে হয়েছে। অন্যের কথা নয় আমি নিজের কথা বলছি, আমরা দুআ প্রার্থনা করি মসজিদে গিয়ে; আল্লাহর কাছে চাওয়ার জন্য মসজিদ থেকে উত্তম জায়গা আর হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধর্মের ও মতের প্রোগ্রাম ও চর্চা চলবে। কেউ কোনো বৈষম্যের শিকার হবে না।’
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ছাত্র হল-১-এর প্রভোস্ট মো: আসাদুজ্জামান সাদি, কৃষিবিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো: আলী আফজাল, বোটানি বিভাগের অধ্যাপক ড. শাখাওয়াত হোসেনসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অন্য ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।



