‘১৯ জুলাই মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে আমার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়। ১০ থেকে ১২ মিনিটের ভিতরেই মারা যায় সে। ছেলের স্মৃতি, সেই রক্তমাখা মুখ, বুক, মাথা এখনো ভুলতে পারি না। ছেলের বিভিন্ন স্মৃতি বারবার মনে আসে। প্রতিদিনই ক্যালেন্ডারের পাতায় একটি করে দিন কেটে রাখি। আজ এক বছর ১৫ দিন।’ এভাবেই শহীদ ইঞ্জিনিয়ার রাকিবুল হোসেনের স্মৃতিচারণ করছিলেন বাবা আবু বকর সিদ্দিক।
রোববার (৩ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে জুলাই শহীদ পরিবারের সাথে মতবিনিময় ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে ১৭টি শহীদ পরিবার ও আন্দোলনে আটক হওয়া ৩১ জন শিক্ষার্থীকে সম্মাননা দেয়া হয়। এ সময় তারা জুলাইয়ের বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করেন। একইসাথে স্বজনদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ন্যায়বিচার এবং জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
জুলাই বিপ্লব প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ড. শাহীনুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ভিসি অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী ও ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবির সাবেক সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়কসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার শহীদ সবুজ হোসেনের স্ত্রী রেশমা খাতুন বলেন, ‘স্ত্রী-সন্তানের মায়া ত্যাগ করে আমার স্বামী আন্দোলনে গিয়েছিল। ফ্যাসিস্টের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি শহীদ হয়েছেন। তাকে হত্যার বিচার চাই। আমরা শহীদ পরিবারের সদস্যরা কারো থেকে কোনো অনুদান চাই না। আপনারা তাদের পর্যাপ্ত সম্মানটুকু দিবেন এটাই চাওয়া।’
ভিসি অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশে ক্রিয়াশীল সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান আপনারা একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলুন। এটি করতে না পারলে শহীদদের রক্ত ঋণ শোধ হবে না। ছাত্রদের কাছে আবেদন, যে মুক্তি আমরা পেয়েছি এ মুক্তিকে আমাদের ধরে রাখতে হবে। সকলের ঐকমত্যে সংস্কার জরুরি।’
তিনি বলেন, ‘এ শহীদ পরিবারকে যেন আমরা ভুলে না যাই। নতুন বাংলাদেশ গড়তে জুলাইয়ের স্পিটকে আমরা যেন ভুলে না যাই। আপনারা সবাই জাগ্রত থাকবেন। সকল ষড়যন্ত্র আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করতে হবে।’