জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে একটি প্রতারক চক্র ‘মেধা বৃত্তি’ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করছে এমন অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগীদের বরাতে জানা যায়, প্রতারকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮ থেকে ৫৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নাম, বিভাগ ও বর্ষ, বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দেয়া ব্যক্তিগত তথ্য এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য জেনে অভিভাবকের মোবাইলফোনে যোগাযোগ করে। পরে ‘বৃত্তি অনুমোদন’ হয়েছে জানিয়ে মোবাইল নম্বরে ও ই-মেইলে ওটিপি পাঠানো হবে বলে জানায় এবং তা শেয়ার করতে বলে। শিক্ষার্থী বা তার অভিভাবক ওটিপি জানিয়ে দিলেই প্রতারকরা সেই কোড ব্যবহার করে বিকাশ, নগদ বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ঢুকে টাকা তুলে নিচ্ছে।
ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ৫৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফুতি রায় ত্রিপুরা বলেন, ‘গত ২০ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ৯টার পর দু’টি নম্বর থেকে ফোন করে একটি প্রতারক চক্র আমাকে জানায়, আমি নাকি একটি ‘বোর্ড বৃত্তি’ পেয়েছি, যার পরিমাণ প্রায় ১৮ হাজার টাকা। অথচ বাস্তবে আমি কোনো বোর্ড বৃত্তির আওতায় ছিলাম না। তারা দাবি করে, আগের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো যাচ্ছে না, তাই দ্রুত প্রাইম ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নম্বর অথবা এটিএম কার্ডের ১৬ ডিজিট নম্বর দিতে হবে, নইলে ওই রাতেই টাকা বাতিল হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় আমি বুঝতে পারি এটি প্রতারণা এবং সাথে সাথে নম্বর দু’টি ব্লক করে দেই। ফোন নম্বর ব্লক করার পরও হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে কল আসতে থাকে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো প্রতারকরা আমার নাম, বিভাগ, ব্যাচ, মায়ের নাম, নমিনি সংক্রান্ত তথ্য, মোবাইল নম্বর এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরসহ অত্যন্ত সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য জানত। এতে স্পষ্ট বোঝা যায়, কোথাও থেকে বড় পরিসরে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই ঘটনা শুধু ব্যক্তিগত নয়, এটি সামগ্রিকভাবে শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের তথ্য নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি। বিষয়টি দ্রুত খতিয়ে দেখা এবং ভবিষ্যতে এমন প্রতারণা রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।’
আবিদ হাসান নিলয় নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘গতকাল দুপুরে আমার বাসায় বাবার নম্বরে কল দিয়ে প্রতারক চক্র আমার নাম থেকে শুরু করে এনআইডি নম্বরসহ সব তথ্য বলে। তারা জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দেয়া আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বৃত্তির টাকাটি যাচ্ছে না। তারা ডাচ বাংলা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক বা ক্রেডিট কার্ডের নম্বর চায় এবং গতকালের মধ্যে অ্যাকাউন্ট নম্বর না দিলে টাকা পাব না বলে জানায়। পরে বাবা আমার মামার ক্রেডিট কার্ডের নম্বর দিলে চক্রটি ই-মেইলে ওটিপি কোড পাঠায় এবং কার্ডে থাকা চার হাজার টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নেয়।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি এখনো অবগত নই এবং কেউ এখনো অভিযোগ করেননি। তবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। প্রতারণার শিকার হওয়া শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে এ বিষয়ে পোস্ট করলে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়। অনেকেই ধারণা করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অনলাইন আবেদন ফর্ম, বৃত্তি সংক্রান্ত তথ্যপত্র, অভ্যন্তরীণ ডেটাবেইস বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে থাকা অগ্রণী ব্যাংক থেকেই হয়তো এসব তথ্য ফাঁস হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (উচ্চশিক্ষা ও বৃত্তি) লুৎফর রহমান আরিফ বলেন, ‘এটি একটি উদ্বেগজনক বিষয়। আমি এ বিষয়ে এখনো জানি না। তবে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকেও তদন্ত করে দেখা হবে তথ্য চুরির উৎস কোথায়।’
জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ম্যানেজার আব্দুর রহমান বলেন, ‘ব্যাংক থেকে তথ্য ফাঁস হওয়ার সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রতারক চক্রটির কাছে একজন শিক্ষার্থীর যেসব তথ্য আছে, তার সম্পূর্ণটা আমাদের কাছে নেই। তাছাড়া ব্যাংক থেকে তথ্য নিতে হলে ব্যাংকের ওয়েবসাইট হ্যাক করতে হবে, কিন্তু এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি।’



