ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ভিডিও করায় সাংবাদিকদের মারধর, ফোন কেড়ে নিয়ে তথ্য লোপাট

*ধামাচাপা দিতে নারী শিক্ষার্থীকে ভিক্টিম সাজানোর চেষ্টা *২২ ঘণ্টা পর মোবাইলফোন ফেরত

ফোনের সকল তথ্য লোপাট করা হয়েছে। সব বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। প্রসিডিউর অনুযায়ী পদক্ষেপ নিব।

তাজমুল জায়িম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

Location :

Kushtia
সংগৃহীত

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) অর্থনীতি বিভাগের আন্তঃসেশন ফুটবল টুর্নামেন্টে মারামারির ঘটনায় ভিডিও করায় মোবাইলফোন কেড়ে নিয়ে তিনজন সাংবাদিককে দফায় দফায় মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এদিকে ২২ ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের মাধ্যমে সেই ফোন সাংবাদিকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে ফোনের সকল গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট লোপাট করে দেয়া হয়। ফলে সকল বিষয়ে বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগীরা।

জানা যায়, ১২ জুলাই বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ফুটবল মাঠে অর্থনীতি বিভাগের আন্তঃসেশন খেলাকে কেন্দ্র করে হাতাহাতিতে জড়ান বিভাগটির সিনিয়র-জুনিয়ররা। এ সময় ভিডিও করতে গেলে দৈনিক আমাদের বার্তার ইবি প্রতিনিধি সাংবাদিক আরিফ বিল্লাহ’র মোবাইল কেড়ে নেন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আফসানা পারভীন তিনা। পরে তার উস্কানিতে আরিফকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের অভিযোগপত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।

এদিকে সহকর্মীকে মারধর করার সময় বার্তা ২৪’র ইবি প্রতিনিধি নূর ই আলম ভিডিও করতে গেলে তাকেও মারধর করেন বিশৃঙ্খল ওই শিক্ষার্থীরা। পরবর্তী সময়ে একইভাবে আজকালের খবরের প্রতিনিধি রবিউল আলম এলে তাকেও মারধর করেন তারা। এ সময় অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সাব্বির, নাহিদ হাসান, মিনহাজ, সৌরভ দত্ত, রিয়াজ মোর্শেদ, সৌরভ সোহাগ, পান্না, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের অজিল, সাইফুল, রাকিব, মশিউর রহমান রিয়ন ও হৃদয় মারধর করেন সাংবাদিকদের।

এদিকে ঘটনার পর সেখানে অন্য সাংবাদিকরা সমাধানের জন্য গেলে তাদের সাথেও বাগ্বিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে কয়েকজন সাংবাদিক সহকর্মীকে মারধরের ঘটনায় উত্তেজিত হলে তাদেরও মারধর করা হয়।

ধামাচাপা দিতে নারী শিক্ষার্থীকে ভিক্টিম সাজানোর চেষ্টা

এদিকে অভিযুক্ত ছাত্রী তিনাকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেন তিনা নিজেই। ঘটনার সময় সুস্থ থাকলেও পরবর্তী সময়ে ঘটনার মোড় ঘুরাতে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যালে ভর্তি হন তিনা। এ সময় সাংবাদিকরা তাকে ফোন করলে তিনি এক সাংবাদিককে বলেন, ‘আমাকে মারধর করা হয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়লে চারটা ইনজেকশন দেয়া হয়েছে।’ এদিকে আরেক সাংবাদিককে তিনি বলেন, ‘আমাকে তিনটি স্যালাইন দেয়া হয়েছে।’

তবে মেডিক্যাল সেন্টারের দায়িত্বরত ডা: এস এম সাহেদ হাসান বলেন, ‘তার শরীরে কোনো আঘাতের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্যানিক অ্যাটাক হয়েছিল তাই ঘুমের ইনজেকশন দেয়া হয়।’

এদিকে দায়িত্বরত কর্মকর্তা জিহাদ হোসেন বলেন, ‘ওই ছাত্রীকে দুইটা ঘুমের ইনজেকশন দেয়া হয়েছে। আর তার বন্ধুরা জোরাজুরি করছিল, তাই একটি স্যালাইন দেয়া হয়।’

ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের দাবি, ঘটনা ধামাচাপা দিতে মূলহোতা তিনা নিজেকে অসুস্থ দাবি করেছেন। এছাড়া মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের সাথেও তার বক্তব্যের মিল নেই। এতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে, তিনি নিজে অভিযোগ থেকে বাঁচতে চান এবং ঘটনার মোড় ঘুরাতে চায়।

আধা ঘণ্টা পর অসুস্থ দাবি

এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী সহ-সমন্বয়ক গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘আমি প্রায় পুরো ঘটনার সময়ে সেখানে ছিলাম। আমি ওই মেয়েকে মারধর করতে দেখিনি। আমার দেখার বাইরে কিছু হয়েছে কি না জানি না। তবে ঘটনা শেষ হওয়ার পর প্রক্টর স্যার ও সমন্বয়ক সুইট ভাই শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলছিলেন। এ সময় সেই মেয়ে স্বাভাবিক ছিল ও কথা বলছিল। প্রায় আধা ঘণ্টা পরে সে নিজেকে অসুস্থ দাবি করলে তাকে প্রক্টর স্যারের গাড়িতে মেডিক্যালে পাঠানো হয়।’

এছাড়া আরো একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী একই বিষয় নিশ্চিত করেন নয়া দিগন্তকে।

২২ ঘণ্টা ফোন আটকে রেখে তথ্য লোপাট

এদিকে শনিবার ঘটনার সময় কেড়ে নেয়া মোবাইলফোনটি ২২ ঘণ্টা পর প্রক্টরের মাধ্যমে ফেরত পাঠিয়েছে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা। পরে রোববার বেলা ৩টার দিকে ভুক্তভোগী সাংবাদিককে ওই ফোন হস্তান্তর করা হয়। তবে এ সময় দেখা যায়, ফোনটি রিসেট দেয়া রয়েছে। যার মাধ্যমে মোবাইলের সকল তথ্য কেটে দেয়া হয়। মারামারির ভিডিও, ছবিসহ যাবতীয় তথ্য লোপাটের উদ্দেশে এ রিসেট দেয়া হয়।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিক আরিফ বিল্লাহ আরো একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। তার দাবি, ‘ওই ফোনে ঘটনার দিনের গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টসহ নিজের অনেক দরকারি ডকুমেন্ট ছিল।’

এদিকে গতকাল ঘটনার সময় এক পথচারী মারামারির ভিডিও করলে অভিযুক্তরা এসে তাকে হুমকি দিয়ে ভিডিও ডিলিট করায় বলেও জানা গেছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আফসানা পারভীন তিনা বলেন, ‘বিভাগের স্যাররা বিষয়টি সমাধান করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। তাই এ ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’

বিভাগীয় সভাপতি পার্থ সারথী লস্কর বলেন, ‘বিষয়গুলো নিয়ে আমরা প্রক্টর স্যার ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা চাচ্ছি এর সুষ্ঠু একটা সমাধান হোক।’

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান বলেন, ‘কালকে থেকে ফোনটি দেয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের বলা হয়েছিল কিন্তু আজকে বিভাগীয় সভাপতির মাধ্যমে তারা ফোনটি পাঠিয়েছে। ফোনের সকল তথ্য লোপাট করা হয়েছে। সব বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। প্রসিডিউর অনুযায়ী পদক্ষেপ নিব।’