ব্রাকসু নির্বাচন ২৯ ডিসেম্বর, বয়কট ছাত্র সমন্বয়কদের

মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) রাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রফেসর ড. মো: শাহজামানসহ ছয় নির্বাচন কমিশনার ব্রাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন।

সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর ব্যুরো

Location :

Rangpur
প্রতিবাদী শিক্ষার্থীরা
প্রতিবাদী শিক্ষার্থীরা |নয়া দিগন্ত

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ও হল ছাত্র সংসদ (ব্রাকসু) নির্বাচনের জন্য আগামী ২৯ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে এ সিডিউল বয়কট করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র সমন্বয়করা। তারা শীতকালীন ছুটির আগেই নির্বাচনের তারিখ দাবি করেছেন।

মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) রাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রফেসর ড. মো: শাহজামানসহ ছয় নির্বাচন কমিশনার ব্রাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। এর আগে সকাল থেকেই তারিখ ঘোষণা দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে শিক্ষার্থীরা।

ঘোষিত তফসিলে বলা হয়েছে, ১৮ নভেম্বর আচরণবিধি (প্রস্তাবিত) সিন্ডিকেট সভাপতি বরাবর প্রেরণ, ২২ নভেম্বর খসরা ভোটার তালিকা প্রকাশ, ২৪ নভেম্বর আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি, ২৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ। ২৭ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম বিতরণ, ২ ও ৩ ডি ডিসেম্বর মনোনয়ন দাখিল, ৪ ও ৬ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই, ৭ ডিসেম্বর প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ, ৮ ডিসেম্বর প্রার্থী তালিকা নিয়ে আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি, ৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, ১০ ডিসেম্বর প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট, ১৩ ডিসেম্বর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ।

২৯ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ। সকাল ৯টা থেকে ৪টা পর্যন্ত। ভোট গ্রহণ শেষে গণনাঅন্তে ওইদিনই ফলাফল ঘোষণার কথাও বলা হয়েছে তফসিলে।

এদিকে, আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই কিংবা প্রেস ব্রিফিং ছাড়াই শুধু নোটিশ বোর্ডে টাঙ্গিয়ে ব্রাকসুর মতো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার বিষয়টিতে ক্ষোভ ঝড়ছে ক্যাম্পাসে। তফসিল প্রত্যাখ্যান করে শীতকালীন ছুটির আগেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা দাবি জানিয়েছেন ছাত্র সমন্বয়করা। তারা বিক্ষোভ করে সমাবেশ থেকে এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন।

এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন বলেন, ব্রাকসু নির্বাচনের যে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে নির্বাচন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সাথে হটকারিতা করলো। তাদের যে চিন্তা সেটা হলো নির্বাচনের সময়কে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা। কারণ শীতকালীন ছুটি হলে শিক্ষার্থীরা বাড়িতে যাবে। তখন নির্বাচন হবে না। আমরা চাই ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হোক।’

অপর সমন্বয়ক জয় বলেন, ‘প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে ব্রাকসু নির্বাচন পিছিয়েছে। এমন একটা সময় দিয়েছে যে, নির্বাচন হয় হোক, না হয় নাই। এটা তারা দায়সারা কাজ করেছে। নির্বাচনের যে তফসিল এটা আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের যে প্ল্যাটফরম সেটা তারা তৈরি করতে দিবে না। এ বিষয়ে আমরা বুধবার সিদ্ধান্ত নিয়ে আন্দোলন ঘোষণা করব।’

অপর সমন্বয়ক আশিকুর রহমান বলেন, ‘প্রশাসন যে রোডম্যাপ ঘোষণা করলো, এর মাধ্যেমে আমাদের প্রশ্ন— বন্ধের মধ্যে কিভাবে একটা নির্বাচন সম্ভব হয়। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে হবে, এটা গণতন্ত্রের চর্চা। সেকারণে আমাদের সন্দেহ, নির্বাচন দেয়ার মন-মানসিকতা নিয়ে তারা এই তারিখ ঘোষণা করেনি। তারা শিক্ষার্থীদের আবেগের জায়গায় আঘাত হেনেছেন। তারা যে সময়ে তারিখ ঘোষণা করেছেন, তাতে নির্বাচন সম্ভব নয়। শীতকালীন ছুটির আগেই সেটা করতে হবে। তা নাহলে আমরা আন্দোলনে যাব।’

অপর সমন্বয়ক ও ছাত্রশিবির নেতা আহমেদুল আল বীর জানান, ‘আমরা চেয়েছিলাম ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই যেন ব্রাকসু নির্বাচন শেষ হয়। কিন্তু প্রশাসন দিয়েছে ২৯ ডিসেম্বর। সে সময় শীতকালীন ছুটি থাকবে। তার ওপর জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। সেসময় নির্বাচন হওয়া নিয়ে শঙ্কা আছে। তাই আমরা এই তারিখ প্রত্যাখ্যান করছি। কোনোভাবেই ওই তারিখে নির্বাচন সম্ভব না। এগিয়ে এনে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে।’

অপর সমন্বয়ক ও ছাত্রদল নেতা ইমরান জানান, ‘তফসিলকে আরা সাধুবাদ জানাই। আমরা চাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন হোক।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. মো: শাহজামান জানান, ‘শিক্ষার্থীরা তফসিল প্রত্যাখ্যান করার যে বিষয়টি এসেছে, সে বিষয়ে আমি এককভাবে সিদ্ধান্ত দিতে পারবো না। তাদের চাওয়ার প্রেক্ষিতে আমরা ইসি বসে পর্যালোচনা করে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে তফসিল ঘোষণা করেছি। যে সময়ের মধ্যে আমাদের নির্বাচন করা সম্ভব, সে পর্যন্ত মিনিমাম সময়ের মধ্যেই আমরা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর বাইরে গেলে তো আমরা সেটা করতে পারবো না। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে কী পদক্ষেপ সেটা ইসি বসে আমরা সিদ্ধান্ত নিব।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. এম শওকাত আলী জানান, ‘শিক্ষার্থীরা বয়কট ঘোষণা করেছে কিনা আমি জানি না। নির্বাচন কমিশন ইন্ডিপেনডেন্ট। তারা তফসিল ঘোষণা করেছে। এখানে ইন্টারফেয়ার করার ভিসি হিসেবে আমার কোনো এখতিয়ার নেই। তবে বুধবার আমাদের একাডেমিক কাউন্সিল আছে। সেখানে আমরা শীতকালীন ছুটি জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে নিব। তাহলে নির্বাচন ও কনভোকেশন হতে কোনো সমস্যা হবে না।’

ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে শীতকালীন ছুটি। চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। অফিস খুলবে ২৭ ডিসেম্বর।