জাকসু নির্বাচনে ইতিহাস গড়তে চায় শিবির

গত ১ বছরে বিতর্কিত কোনো কাজ করতেও দেখা যায়নি সংগঠনটির নেতাকর্মীদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পূর্বের তুলনায় ধর্মীয় অনুভূতি বৃদ্ধি অনেকটা স্বস্তি দেবে শিবিরকে।

আতাউর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাকসু নির্বাচনে ইতিহাস গড়তে চায় শিবির
জাকসু নির্বাচনে ইতিহাস গড়তে চায় শিবির |ছবি : নয়া দিগন্ত

প্রায় ৩৫ বছর পূর্বে ১৯৮৯ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছাত্রদল নেতা হাবিবুর রহমান কবিরের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের কিছু সংখ্যক নেতাকর্মীকে। সেই ঘটনার পর থেকেই প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে পারেননি সংগঠনটি নেতাকর্মীরা। তবে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পলায়নের পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে গত বছরের ২৯ অক্টোবর কমিটি প্রকাশের মাধ্যমে প্রকাশ্য জাবির রাজনীতিতে আসেন তারা। প্রকাশ্য আসার পরপরই ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিয়ে নিয়মিত কাজ করতে দেখা গেছে তাদের। ৩৩ বছর পর আগামী ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় জাকসু নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেল ঘোষণা করেছে শিবির। এবারের জাকসু নির্বাচনে জয়লাভ করে ইতিহাস গড়ার আশা করছেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।

দীর্ঘদিন পর সংগঠনটির প্রকাশ্যে ফিরে আসা নিয়ে শুরুর দিকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেলেও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করতে দেখা গেছে শিবিরকে। নিয়মিত সাংগঠনিক কর্মসূচির বাইরে গত এক বছরে শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি হেলথ ক্যাম্প, আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি, পথশিশুদের খাদ্য ও শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ, ব্লাড গ্রুপিং ক্যাম্প, নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা জোরদারের জন্য স্মারকলিপি ইত্যাদি শিক্ষার্থীবান্ধব একাধিক কাজে দেখা গেছে সংগঠনটিকে।

এ ছাড়াও বিশ্বব্যিালয়ের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে প্রশাসনকে ৪১ দফা দাবি জানিয়েছেন তারা। এসব কাজের জন্য শিবিরের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে একাংশের আস্থাও কুড়িয়েছেন। ক্যাম্পাসে দীর্ঘ অনুপস্থিতির পর জাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান পুনরায় সুদৃঢ় করতে চায় সংগঠনটি। শিবিরের একাধিক নেতাকর্মীর সাথে কথা বলে জানা যায়, এবারের জাকসু নির্বাচনে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে নতুন ইতিহাস গড়তে চান তারা।

এ ছাড়াও জাকসু নির্বাচনে কিছুটা ‘ইনক্লুসিভ’ প্যানেল গঠনের চেষ্টা করতেও দেখা গেছে সংগঠনটিকে। শিবির সমর্থিত কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদের জন্য ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ নামে পূর্ণাঙ্গ প্যানেলে ৬ জন নারী শিক্ষার্থী, ১ জন দৃষ্টিজয়ী শিক্ষার্থী এবং জুলাই আন্দোলনের আহত শিক্ষার্থীসহ বিশ্বব্যিালয়ের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের শিক্ষার্থীও রয়েছে। প্যানেলে ভিপি পদে ফার্মেসি বিভাগের (৪৭তম) ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফুল্লাহ, জিএস পদে ইংরেজি বিভাগের (৪৮তম) ব্যাচের শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের (৪৯তম) ব্যাচের শিক্ষার্থী ফেরদৌস আল হাসান এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে দর্শন বিভাগের (৪৮তম) ব্যাচ শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

অন্য পদগুলোর মধ্যে শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদে ফার্মেসি বিভাগের আবু উবায়দা উসামা, পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সম্পাদক পদে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সাফায়েত মীর, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ইংরেজি বিভাগের জাহিদুল ইসলাম বাপ্পি এবং সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শাহরিয়ার ইসলাম, সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের রায়হান উদ্দিন, নাট্য সম্পাদক হিসেবে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের রুহুল ইসলাম এবং ক্রীড়া সম্পাদক পদে ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শফিউজ্জামান শাহীন, সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (পুরুষ) পদে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের মহাদী হাসান, সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (নারী) পদে গণিত বিভাগের লুবনা, আইটি ও গ্রন্থাগার পদে ফার্মেসি বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের রাশেদুল ইমন লিখন, সমাজসেবা ও মানবসেবা উন্নয়ন পদে রসায়ন বিভাগের হাফেজ আরিফুল ইসলাম, সহ-সমাজসেবা ও মানবসেবা উন্নয়ন সম্পাদক (পুরুষ) পদে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের তৌহিদ ইসলাম, সহ-সমাজসেবা ও মানবসেবা উন্নয়ন (নারী) পদে ফার্মেসি বিভাগের নিগার সুলতানা, স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক পদে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের হুসনী মোবারক, পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক পদে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের তানভীর রহমান মনোনীত হয়েছেন। এ ছাড়াও কার্যকরী সদস্য পদে রয়েছেন - ফাবলিহা জাহান, নাবিলা বিনতে হারুন, নুসরাত জাহান, হাফেজ তরিকুল ইসলাম, আবু তালহা ও মহসিন।

জয়ের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে বেশ কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে শিবির সমর্থিত প্যানেলের। শিবির প্রকাশ্যে আসার পর গত এক বছরে তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা যায়নি। শিক্ষার্থীদের জন্য কল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি ভোট টানতে কৌশলগত প্রভাব ফেলবে বলে অনেকের ধারণা। গত ১ বছরে বিতর্কিত কোনো কাজ করতেও দেখা যায়নি সংগঠনটির নেতাকর্মীদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পূর্বের তুলনায় ধর্মীয় অনুভূতি বৃদ্ধি অনেকটা স্বস্তি দেবে শিবিরকে। দলের বাইরে বিভিন্ন নির্দলীয় ও সামাজিক সংগঠনের ভোট টানতে তাদের প্রতিনিধিদের প্যানেলে রাখা ভোটের রাজনীতিতে এগিয়ে রেখেছে শিবিরকে।

শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আমাদের নতুনভাবে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছে। আমরা গত বছরে থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য অনেকগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। নির্বাচনী প্রচারণা করতে গিয়ে আমাদের সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে নতুন এক বিজয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।

জাকসু নির্বাচন নিয়ে জিএস পদপ্রার্থী মাজহারুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ সময় ছাত্রশিবির তার স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি, শিক্ষার্থীদের কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারেনি। গত এক বছর আমরা একাডেমিক, সামাজিক ও সেবামূলক নানা কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছি। আমরা আশা করছি জাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা আমাদের পাশে থাকবে।