দুঃখ প্রকাশের পরও বরখাস্তের দাবি

ইবি শিক্ষকের আপত্তিকর মন্তব্য তিনমাস পর ভাইরাল

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে একটি ফেসবুক গ্রুপে আব্দুল্লাহ বিন আসাদ নামের এক আইডি থেকে অডিওটি ছড়িয়ে পড়ে। এবিষয়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করলে বুধবার সকালে বিষয়টিকে ‘স্লিপ অফ টাং’ দাবি করে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন ড. মিঝি।

তাজমুল জায়িম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক |নয়া দিগন্ত

ইবি প্রতিনিধি:

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দীন মিঝির একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

সেখানে ‘সাজিদ হত্যার বিচারের আন্দোলন’ নিয়ে এক শিক্ষার্থীকে শাসানোর সময় এক নারী শিক্ষার্থীকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করতে শোনা যায় তাকে।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে একটি ফেসবুক গ্রুপে আব্দুল্লাহ বিন আসাদ নামের এক আইডি থেকে অডিওটি ছড়িয়ে পড়ে। এবিষয়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করলে বুধবার সকালে বিষয়টিকে ‘স্লিপ অফ টাং’ দাবি করে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন ড. মিঝি। এর পরবর্তীতে বেলা ১১ টায় ড. মিঝির বরখাস্তের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে ক্ষমা চাওয়ার পরেও বরখাস্তের দাবি করাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন অনেকে।

জানা যায়, তিনমাস আগে এক শিক্ষার্থীর সামনে এসব কথোপকথন হয় বলে জানা গেছে। অডিওতে আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থীকে শাসাতে শোনা যায় ড. মিঝিকে। এছাড়া সাজিদ আব্দুল্লাহ ও আন্দোলনকারী নারী শিক্ষার্থীদের নিয়েও আপত্তিকর মন্তব্য করেন তিনি। অডিওতে তিনি বলেন, “ন্যাংটা মাইয়া কতগুলো নিয়ে সেখানে দাঁড়ায়। এক মাইয়া নিয়ে গেছে ওখানে। আরেক আরেক হাইওয়ান (পশু)। ও হাইওয়ান নিয়ে গেছে ওখানে। ওটা তো ইনসান না, হাইওয়ান। আমি আল-কোরআনের টিচার। আমি গেছি (সাজিদের জানাজায়)। আমার সাথে গেছে জিন্সের প্যান্ট পরা, গেঞ্জি পরা মাইয়া। মরে গেছি আমি।”

এদিকে অডিও ফাঁসের পর বুধবার সকালে তার মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন ড. মিঝি। তিনি বলেন, “আমি আল-কুরআন বিভাগের সভাপতি হিসেবে শহীদ সাজিদ আব্দুল্লাহর জন্য বিভাগের ছাত্র শিক্ষকদের নিয়ে বিচার চেয়ে আন্দোলন করেছি। এরপরও বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকসহ আমার আরেকজন ছাত্রের সাথে কথা বলতে গিয়ে অসাবধানতাবশত কিছু শব্দ চয়নে ভুল হয়েছে বলে আমি মনে করি। এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করছি।”

পরবর্তীতে বেলা ১১টায় এর প্রতিবাদে মানববন্ধনের পর ড. মিঝিকে বরখাস্তসহ পাঁচ দফা দাবিতে ভিসির কাছে স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা। অন্য দাবিগুলো হলো সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যার খুনিদের অতিদ্রুত গ্রেফতার, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতি হুমকি প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের “ন্যায্য প্রতিবাদ ও আন্দোলনে বাঁধা প্রদানকারীদের উদ্দেশ্য যাচাইয়ের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা ও শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশের অধিকার ও অন্দোলনের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষিত রাখতে হবে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায় ভাইরাল হওয়া অডিওটি প্রায় তিনমাস আগের। তিনমাস আগের ঘটনা এতোদিন পরে প্রকাশ করা এবং ক্ষমা চাওয়ার পরও বরখাস্তের দাবিকে অস্বাভাবিক বলে দাবি করেছেন শিক্ষার্থীদের একাংশ। এ বিষয়ে তাজমিন রহমান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি স্যারের কথার তীব্র নিন্দা জানাই। তার ভাষা সংযত করা উচিত। তবে এটি নিয়ে ঘোলা জলে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে অনেকে। এ কথাটা মূলত ঐশি নামে একজনকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে কিন্তু পুষ্প নামের আরেক জনকে হাইলাইটস করে পোস্ট করছেন সবাই। পুষ্পকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে কিনা সেটাও ভাবা দরকার। আর সামনে আল কুরআন বিভাগের নিয়োগ বোর্ড আছে। আর এ কারণেই হয়তো তিনমাস পর অডিওটি ভাইরাল করা হলো। তিনমাস আগে কেন ভাইরাল করা হলো না? নিয়োগ বোর্ডের সময়েই কেন এটি ভাইরাল করা হচ্ছে? ক্যাম্পাসে বায়োটেকনোলজি ও ডিএস বিভাগে এর থেকে বড় বড় ঘটনা ঘটলেও আজকের প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীদের আমরা দেখিনি। এছাড়া স্যার ক্ষমা চাওয়ার পরও যারা বরখাস্তের দাবি তুলছে বুঝতে হবে এটি উদ্দেশ্যপ্রনোদিত। এবং আজকের আন্দোলটি শুরু থেকেই গোজামিলের ছিলো বলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী বোরহান কবির বলেন, এই অডিও তিনমাস পর কেন ভাইরাল হয়েছে সেটা তো আমরা জানি না, “এটা আল কুরআন বিভাগের ভিতর থেকেই করা হয়েছে। তাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকলে যারা ভাইরাল করেছে তাদের থাকতে পারে। আমাদের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। আর তার ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে আপাতত কোনো মন্তব্য করছি না।”

ভিসি অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘আগামীতে কোনো শিক্ষক যেন এই ধরনের বক্তব্য না দেন তোমাদেরকে এ ব্যাপারে নিশ্চিত করছি। আর লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেব।’