ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়

ফ্যাসিস্ট রেজিমের দুর্নীতি তদন্তে অনিয়মের অভিযোগ, নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধের প্রতিবাদ

বর্তমান ভিসির বিরুদ্ধে একটি বেনামী অভিযোগ বেআইনিভাবে আমলে নিয়ে তদন্ত করার পেছনে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে একটি গভীর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

অনলাইন প্রতিবেদক

Location :

Dhaka
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়।
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। |নয়া দিগন্ত

ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাসিস্ট রেজিমে সংঘটিত দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্তে অনিয়ম ও ভিন্নখাতে প্রবাহত করার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি তদন্তকারীর জ্যেষ্ঠতা ও ন্যায্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, বিগত ফ্যাসিস্ট রেজিমে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক দূর্নীতি ও অনিয়মের হোতা সাবেক ভিসি ও প্রো-ভিসির বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটি বর্তমান প্রশাসনের কার্যক্রম উঠে পড়ে লেগেছে।

তদন্ত কমিটির কার্যক্রম নিয়ে আপত্তি জানিয়ে বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ড. মো: শামছুল আলম ৩০ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি দিয়েছেন।

এদিকে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে নিয়োগ পরীক্ষার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে রোববার (৩০ নভেম্বর) আগারগাঁও এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসির) সামনে মানববন্ধন করেছেন চাকরি প্রত্যাশীরা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে দেয়া চিঠিতে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি উল্লেখ করেছেন, বিগত ফ্যাসিস্ট রেজিমে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম সংঘটিত হয়। এ বিষয়ে তদন্তের জন্য গত ১৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক কমিশনের সদস্য সাইদুর রহমানকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. মো: আব্দুর রশীদের বিরুদ্ধে আনীত অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতাসহ ১০টি অভিযোগ এবং সাবেক প্রো-ভিসি মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে উথ্বাপিত বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

ওই কমিটি তদন্ত কাজ শুরু করার আগেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন গত ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম সরকারকে প্রধান করে আরেকটি কমিটি গঠন করে। কমিটিকে আগের তদন্ত কমিটির টার্মস অফ রেফারেন্সের সাথে সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও কমিশনে প্রাপ্ত সকল অভিযোগও তদন্ত করার বিষয়টি যুক্ত করা হয়।

এখানে লক্ষ্যনীয় হচ্ছে পূর্বে গঠিত ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির টার্মস অফ রেফারেন্সের সাথে অধ্যাপক ড. আবুল কালাম সরকারের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির টার্মস অফ রেফারেন্সে বর্তমান ভিসির বিরুদ্ধে একটি বেনামী অভিযোগকে ভিত্তি করে কল্পিত অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্তের বিষয়টিও জুড়িয়ে দেয়া হয়।

জুলাই অভ্যুথ্বানের পর আমি মাত্র এক বছর আগে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। এ এক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো নিয়োগ প্রদান করা হয়নি। আমি সর্বোচ্চ সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। এরপরও একটি বেনামি অভিযোগকে ভিত্তি করে একজন প্রফেসর কর্তৃক ভিসির বিরুদ্ধে তদন্ত করা অত্যন্ত দু:খজনক।

ইউজিসি গঠিত আবুল কালাম সরকারকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠনে ব্যত্যয়গুলো হলো— আবুল কালাম সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। পক্ষান্তরে, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি একটি উচ্চতর পদ। একজন নিম্নপদস্থ কর্মকর্তা কখনো উচ্চতর পদের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত করতে পারে না। এটা আইনের শাসনের সুস্পষ্ট ব্যত্যয়।

আবুল কালাম সরকারের তদন্ত কমিটির সভায় ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১৩ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগের চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের অনুমোদন অনুযায়ী গৃহীত নিয়োগ কার্যক্রম আবুল কালাম সরকারের স্থগিত রাখার নির্দেশ সম্পূর্ণ বেআইনি।

ইউজিসি কর্তৃক তদন্ত কমিটি গঠনের টার্মস অফ রেফারেন্সের প্রধান বিষয় ছিল ফ্যাসিস্ট আমলে সংঘটিত দূর্নীতি ও অনিয়মের তদন্ত করা। কালাম সরকারের কমিটি মূল ইস্যুকে পাশ কাটিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বর্তমান ভিসির বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে। এতে এটা স্পষ্ট যে বর্তমান ভিসিকে হেয় প্রতিপন্ন করার অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে অধ্যাপক ড. আবুল কালাম সরকার কাজ করে যাচ্ছেন।

তদন্ত কমিটি পরিবর্তন করা, তদন্ত কমিটির টার্মস অফ রেফারেন্স পরিবর্তন করা, ফ্যাসিস্ট আমলে সংঘটিত দূর্নীতি ও অনিয়মের তদন্ত না করে বর্তমান ভিসির বিরুদ্ধে একটি বেনামী অভিযোগ বেআইনিভাবে আমলে নিয়ে তদন্ত করার পেছনে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে একটি গভীর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

এমতাবস্থায়, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে নিম্নোক্ত কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো :

১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম সরকারের তদন্ত কমিটি বাতিল করা যেতে পারে।

২. শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসির সদস্য সমম্বয়ে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাসিস্ট আমলে সংঘটিত সকল দূর্নীতি ও অনিয়ম তদন্ত করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে।

৩. ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান নিয়োগ কার্যক্রমের উপর আরোপিত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা যেতে পারে।

অপরদিকে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে নিয়োগ পরীক্ষার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে আবেদনকারী চাকরি প্রত্যাশীরা। রোববার (৩০ নভেম্বর) আগারগাঁও এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসির) সামনে এ মানববন্ধন করেন চাকরি প্রত্যাশীরা।

iSLAMU

চাকরি প্রত্যাশীরা।

মানববন্ধনে তারা বলেন, আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্কুলার অনুযায়ী গত ১২ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও ১১ সেপ্টেম্বর ইউজিসি সে পরীক্ষা হঠাৎ নোটিশ জারির মাধ্যমে বন্ধ করে দেয়। কারণ হিসেবে জানানো হয়— বেনামে একটি অভিযোগপত্র ইউজিসির কাছে এ মর্মে দেয়া হয়েছে যে আরবি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগ বাণিজ্য হচ্ছে। যদিও আইনে বেনামের কোন অভিযোগপত্র গ্রহণ কিংবা তার আলোকে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো বিধান নেই। তারপরও মঞ্জুরী কমিশন রাষ্ট্রীয় সে আইন অমান্য করে বেনামি অভিযোগ গ্রহণ করে এবং পরীক্ষা স্থগিত রাখার জন্য আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নোটিশ দেয়।

মানববন্ধনে উপস্থিত চাকরি প্রত্যাশীরা জানান, যেখানে নিয়োগ পরীক্ষা পর্যন্ত হয়নি সেখানে নিয়োগ বাণিজ্য কীভাবে সম্ভব? মূলত নির্দিষ্ট একটি চক্র উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট করার জন্য এবং সুষ্ঠুভাবে যেন নিয়োগ না হয় সেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এর সাথে ইউজিসির তানজিম আব্দুল্লাহও জড়িত রয়েছে বলে চাকরি প্রত্যাশীরা জানান। তারা বলেন বেনামি অভিযোগের আলোকে গ্রহণ করা ইউজিসি চাকরি পরীক্ষায় যে স্থগিতাদেশ দিয়েছে তা যদি আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে প্রত্যাহার করা না হয় তাহলে সকল চাকরি প্রত্যাশীরা ইউজিসি ঘেরাও কর্মসূচি দিবেন।

মানববন্ধন থেকে তারা ৭২ ঘন্টার আলমেটাম এবং তিন দফা দাবী জানান।

৩ দফা দাবী

ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে নিয়োগ পরীক্ষার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে।

ইউজিসি থেকে ইসলাম বিদ্বেষী তানজিম উদ্দিন খানের অপসারণ করতে হবে।

নাম ঠিকানা বিহীন অভিযোগের ভিত্তিতে গঠিত তদন্ত কমিটি বাতিল করতে হবে