রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে আল্টিমেটাম

‘আবু সাঈদকে শুধু গুলির দৃশ্যটা দেখেছে সারাবিশ্ব। কিন্তু তাকে ছাত্রলীগ আন্দোলনের দিনগুলোতে কিভাবে গলা চিপে ধরেছে, থাপ্পড় দিয়েছে। হেনস্তা করেছে, প্রেসার ক্রিয়েট করেছে। তা আমরা কাছে থেকে দেখেছি।’

সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর ব্যুরো

Location :

Rangpur
সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলেন রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে জেবিন
সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলেন রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে জেবিন |ছবি : নয়া দিগন্ত

আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার আল্টিমেটাম দিয়েছে শির্ক্ষাথীরা।

সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৫টায় ক্যাম্পাসের ক্যাফেটরিয়ায় সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে জেবিন। সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ইতিহাস বিভাগের সানোয়ার ইসলাম ও ম্যানেজম্যান্ট বিভাগের শিবলী সাদিক।

উম্মে জেবিন বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছাত্র সংসদ নির্বাচন। শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, মনের কথা, সমস্যা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরা, শিক্ষার্থীদের ভোটে প্রতিনিধি নিশ্চিত করা, নেতৃত্বের গুণ ও দায়বদ্ধতা গড়ে তোলা, স্বার্থ রক্ষা ও অধিকার আদায়ের জন্য রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি শাক্তিশালী কার্যকর ছাত্র সংসদ থাকা খুবই জরুরি। কোটা আন্দোলনের সময় ৯ দফা দাবির অন্যতম ছিল ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের এক বছর পেরিয়ে গেলেও আবু সাঈদের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দৃশ্যমান কিছু দেখতে পাইনি।’

জেবিন অভিযোগ করে বলেন, ‘এই ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে অন্তুর্ভুক্ত করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তিন মাস আগে আবেদন করা হয়। কিন্তু ওই আবেদনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। ৩৬ দিনে আমরা স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি। কিন্তু ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মতো যৌক্তিক বিষয়ের জন্য আমাদের দীর্ঘসূত্রিতার মধ্যে যেতে হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য খুবই হতাশার।’

উম্মে জেবিন তার লিখিত বক্তব্যে ঘোষণা করেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে দাবি জানাচ্ছি- আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে অর্থাৎ ১২ আগস্টের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ছাত্র সংসদ যুক্ত করে সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। অন্যথায় আমরা শিক্ষার্থীরা জুলাইয়ের মতো কঠোর থেকে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবো।’

প্রশ্নের উত্তরে জেবিন বলেন, ‘আবু সাঈদকে শুধু গুলির দৃশ্যটা দেখেছে সারাবিশ্ব। কিন্তু তাকে ছাত্রলীগ আন্দোলনের দিনগুলোতে কিভাবে তার গলা চিপে ধরেছে, থাপ্পড় দিয়েছে। হেনস্তা করেছে, প্রেসার ক্রিয়েট করেছে। তা আমরা কাছে থেকে দেখেছি। বুয়েটে কিভাবে আবরার ফাহাদকে হত্যা করা হয়েছে সেটা সবার জানা। এগুলো হয়েছে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির জন্য। সে কারণে আমরা চাই না ক্যাম্পাসে কোনো লেজুড়িবৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি চলুক। পরিবর্তে শক্তিশালী ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ছাত্রদের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষিত হোক। প্রশাসন যদি আমাদের ভাষা বুঝতে না পারে তাহলে আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে সেটা আদায় করে নেবো।’

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থী সানোয়ার বলেন. ‘৫ আগস্টের পর থেকেই আমরা বর্তমান প্রশাসনকে বলে আসছি আমরা ছাত্র সংসদ নির্বাচন চাই। কিন্তু প্রশাসন বিষয়টি অনুভব করছে না। কেন করছে না এটা আমাদের প্রশ্ন। প্রশাসন নানা টালবাহনা করছে। তারা বলেছে- ছাত্র সংসদের জন্য গঠনতন্ত্র তৈরি করেছে। কিন্তু এখনো সেটা প্রকাশ করছে না। মুলা ঝুলিয়েছে। আইনে এখনো আসেনি। এটা খুবই হতাশাজনক। আমরা চাই না লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি দিয়ে অতিষ্ঠ হতে। কিন্তু সেটারই আমরা আলামত পাচ্ছি। সেজন্যই আমাদের এই কর্মসূচি। ১২ আগস্টের পর সেটা প্রশাসন বুঝতে পাবে।’

অপর শিক্ষার্থী শিবলি সাদিক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে একটা আইন করা হয়েছে যে, যদি লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি করা হয়, তাহলে সে দলকে বা সে সংগঠনকে শোকজ করা হবে। কিন্তু একটি ছাত্র সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে ক্যাম্পাসে এবং ক্যাম্পাসের বাইরে মিছিল মিটিং করছে। প্রশাসন আইন করেই নিরব। তাদের ব্যপারে কোনো কার্যকরিতা নেই। তাদের শোকজও করে নাই। এতে আমরা শঙ্কিত। এ কারণে আমরা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আল্টিমেটাম দিলাম।