ছাত্রশিবিরের লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন ও কল্যাণ : সভাপতি জাহিদুল ইসলাম

বাংলাদেশে ইনসাফ নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান ডাকসু ভিপি। এছাড়া ব্যক্তিগত জীবনে সাফল্যের জন্য ইসলামকে অগ্রাধিকার দেয়ার পাশাপাশি পিতা-মাতার দোয়ার গুরুত্ব, অহংকার পরিহার ও বিনয়ী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

আব্দুল আউয়াল, রাজশাহী ব্যুরো

Location :

Rajshahi
উপস্থিতদের সামনে বক্তৃতা করছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম
উপস্থিতদের সামনে বক্তৃতা করছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম |ছবি : নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, ‘ইসলামী ছাত্রশিবিরের লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন ও কল্যাণ। অর্থের স্বচ্ছতা, আত্মত্যাগ ও জনশক্তির দায়বদ্ধতাই ইসলামী ছাত্রশিবিরকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে।’

শনিবার (২২ নভেম্বর) রাজশাহী কলেজ মাঠে অনার্স প্রথম বর্ষের (২০২৪-২৫ সেশন) শিক্ষার্থী ও উচ্চ মাধ্যমিকের নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে ‘ক্যারিয়ার গাইডলাইন নবীনবরণ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

শিবির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের মূল আয়ের উৎস হলো জনশক্তিদের দান। সভাপতি থেকে শুরু করে ইউনিট পর্যায়ের একজন কর্মী, প্রত্যেক সদস্যই নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী সংগঠনকে দান করে থাকে। ছাত্রদের আয় না থাকলেও অল্প অল্প করে সঞ্চয় ও দানের যে মনোভাব, সেটিই ছাত্রশিবিরকে টিকিয়ে রেখেছে এবং শক্তিশালী করেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই সামান্য অর্থ সঞ্চয়ের অভ্যাস তাদের মধ্যে দানের মানসিকতা গড়ে তোলে। প্রাথমিক শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুলে যাওয়ার জন্য জেদ করে পাঁচ বা ১০ টাকা নেয়ার চেষ্টা করা হতো। সেই টাকার মধ্য থেকেই দুই টাকা সঞ্চয় করে ভালো কাজে ব্যয় করার মতো অভ্যাস থেকেই কর্মীদের মাঝে দানের মানসিকতা তৈরি হয়। এই উৎসাহই ছাত্রশিবিরের প্রতিটি সদস্যকে সংগঠনের প্রতি আর্থিকভাবে আন্তরিক করে তোলে।’

জাহিদুল ইসলাম আরো বলেন, ‘১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ছাত্রশিবির প্রায় ৪৮ বছরের পথ অতিক্রম করেছে। এই সময়ে সংগঠনের বিপুলসংখ্যক সাবেক সদস্য দেশের প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে অবস্থান করছেন। একাডেমিক ক্ষেত্র থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা থেকে প্রশাসন, দেশ-বিদেশের কোনো প্রভাবশালী অঙ্গনই নেই যেখানে ছাত্রশিবিরের সাবেক কেউ না কেউ নেই। তারা সংগঠনকে সমৃদ্ধ করার জন্য নিয়মিত আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। ছাত্রশিবিরের ব্যয়ে স্বচ্ছতা বজায় থাকে এবং বরাদ্দকৃত অর্থ পুরোপুরি কার্যক্রমে ব্যবহার করা হয়।‘

‘অন্য সংগঠনগুলো কোনো উৎস থেকে ১০ টাকা পেলে তার দুই টাকা কার্যক্রমে ব্যবহার করে, আর বাকি আট টাকা বিভিন্ন পকেটে চলে যায়। কিন্তু ছাত্রশিবিরের বাস্তবতা ভিন্ন। কোনো প্রোগ্রামের জন্য ১০ টাকা বরাদ্দ হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নিজের পকেট থেকে দুই টাকা অতিরিক্ত যোগ করে ১২ টাকা দিয়ে পুরোপুরি কার্যকরভাবে ব্যয় করেন। এতে সংগঠনের কাজের ওপর বরকত আসে’, বলেন তিনি।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজশাহী কলেজ শাখার সভাপতি মাহমুদুল হাসান মাসুমের সভাপতিতত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন ডাকসুর ভিপি ও শিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক সাদিক কায়েম।

তিনি বলেন, ‘শিবিরের কাছে নারীরা সবচেয়ে নিরাপদ এবং শিবিরের চেয়ে বেশি নিরাপত্তা অন্য কোনো সংগঠন দিতে পারে না। শিবির প্রতিষ্ঠার পর থেকে নারীদের শ্লীলতাহানির একটি ঘটনাও ঘটেনি। ছাত্রশিবিরের কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মীর হাতে কোনো নারীর শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের ঘটনার কোনো নজির নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘রাজশাহী কলেজসহ সারা দেশের ক্যাম্পাসগুলোতে অতি দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। রাজশাহী কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে কাজ করবে। ক্যাম্পাসগুলোর সমস্যাগুলো সমাধানের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বশীল নেতৃত্ব গড়ে উঠলে ক্যাম্পাস পরিচালনা থেকে শুরু করে আবাসন সঙ্কটসহ বিভিন্ন জটিলতা সমাধান সহজ হবে।’

জুলাই বিপ্লবে তরুণ সমাজের ভূমিকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তরুণরাই জুলাই বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছে এবং বিপ্লবকে সফল করেছে। তরুণরা ঘোষণা দিয়েছে যে, দেশে আর কখনোই ফ্যাসিবাদ তৈরি হতে দেয়া হবে না। একইসাথে দিল্লির আগ্রাসন ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে তরুণদের রাজপথে থাকতে হবে। বৈষম্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

বাংলাদেশে ইনসাফ নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান ডাকসু ভিপি। এছাড়া ব্যক্তিগত জীবনে সাফল্যের জন্য ইসলামকে অগ্রাধিকার দেয়ার পাশাপাশি পিতা-মাতার দোয়ার গুরুত্ব, অহংকার পরিহার ও বিনয়ী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিবিরের কেন্দ্রীয় ফাউন্ডেশন সম্পাদক আসাদুজ্জামান ভুইয়া, রাকসু ভিপি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, শিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য ও চাকসুর ভিপি ইব্রাহিম হোসেন রনি, রাজশাহী মহানগর সভাপতি মোহা: শামীম উদ্দীন, শিবিরের কেন্দ্রীয় মানবাধিকার সম্পাদক সিফাত উল আলম প্রমুখ।