শিক্ষকের উপর ছাত্রদলের হামলার প্রতিবাদে উত্তাল জবি

‘আমাদের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীদের, যারা জুলাইয়ে আহত হয়েছেন বা আগে ছাত্রদল করেছেন, তাদের উপর ছাত্রলীগ ট্যাগ লাগিয়ে হামলা করা হয়েছে। এমনকি ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ড. এ কে এম রিফাত হাসান ও সহকারী প্রক্টর শফিকুল ইসলাম স্যারের উপরও হামলা চালানো হয়েছে।’

নুর আলম, জবি সংবাদদাতা
বক্তব্য রাখছেন আন্দোলনরত ছাত্ররা।
বক্তব্য রাখছেন আন্দোলনরত ছাত্ররা। |নয়া দিগন্ত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই শিক্ষক ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) তিন নেতার ওপর ছাত্রদলের হামলার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভে ফুঁসছে পুরো ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অছাত্রদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে। একইসাথে হামলায় জড়িত অছাত্রদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবিও জানানো হয়েছে। অন্যথায় আরো কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন তারা।

রোববার (১৩ জুলাই) শহীদ সাজিদ একাডেমিক ভবনের সামনে থেকে প্রতিবাদ মিছিল শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে ভিসি ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং অবিলম্বে হামলায় জড়িতদের আজীবনের জন্য বহিষ্কারের দাবি তোলেন ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে স্লোগান দেন, ‘যেই হাত শিক্ষক মারে, সেই হাত ভেঙে দাও’, ‘ছাত্রদলের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘সন্ত্রাসীদের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘এক দুই তিন চার, অছাত্ররা ক্যাম্পাস ছাড়’, ‘অছাত্রদের গুণ্ডামি চলবে না, চলবে না’, ‘ছাত্র পরিচয়ে সন্ত্রাস, লজ্জা লজ্জা’। এমন নানা স্লোগান তারা দিতে থাকেন।

সংবাদ সম্মেলনে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মারুফ বলেন, ‘এই ক্যাম্পাসে কখনো শিক্ষকের গায়ে হাত তোলার সাহস কেউ দেখায়নি। ৫ আগস্টের পর হঠাৎ করে সেই সাহস তারা কোথায় পেল?’

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তোফায়েল ইসলাম বলেন, ‘আগে ট্যাগের নামে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে আসতে দেয়া হতো না। এখন আবার সেই ট্যাগের রাজনীতি শুরু হয়েছে। শিবির ট্যাগের বদলে এবার ছাত্রলীগ ট্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। আহত শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে আসতে দেয়া হচ্ছে না।’

একই বর্ষের শিক্ষার্থী ইরফান বলেন, ‘আমাদের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীদের, যারা জুলাইয়ে আহত হয়েছেন বা আগে ছাত্রদল করেছেন, তাদের উপর ছাত্রলীগ ট্যাগ লাগিয়ে হামলা করা হয়েছে। এমনকি ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ড. এ কে এম রিফাত হাসান ও সহকারী প্রক্টর শফিকুল ইসলাম স্যারের উপরও হামলা চালানো হয়েছে।’

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, ‘যেখানে প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরাই নিরাপদ নন, সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কিভাবে নিরাপদ থাকবে? অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন পর্যন্ত নিন্দাটুকু জানায়নি। নীরব ভূমিকা পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিও।’

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শহীদ সাজিদ একাডেমিক ভবনের নিচে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী রফিক বিন সাদেক রেসাদের ছাত্রলীগ সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মারধর শুরু করে। এ সময় শিক্ষার্থীকে রক্ষা করতে আসা ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা ড. এ কে এম রিফাত হাসান ও সহকারী প্রক্টর শফিকুল ইসলামকেও গালিগালাজ ও হামলার শিকার হতে হয়। একইসাথে বাগছাসের সভাপতি মো: ফয়সাল মুরাদ, মুখ্য সংগঠক ফেরদৌস হাসান ও যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারুকের উপরও হামলা চালায় তারা।

শিক্ষকের উপর হামলার ঘটনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, অছাত্রদের রাজনৈতিক দখল ও সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আরো কঠোর আন্দোলনে যেতে তারা প্রস্তুত।