পাবিপ্রবিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ২৮ নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি

রিজেন্ট বোর্ডে চার ক্যাটাগরিতে শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেয়া হয়। এগুলো হলো আজীবনের জন্য সনদ বাতিল (১১ জন), ৩ বছরের জন্য সনদ স্থগিত (৭ জন), আজীবন বহিষ্কার (৬ জন), ৩ বছরের জন্য বহিষ্কার (৪ জন)।

পাবিপ্রবি প্রতিনিধি

Location :

Pabna
পাবিপ্রবিতে ছাত্রলীগের ২৮ নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি
পাবিপ্রবিতে ছাত্রলীগের ২৮ নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি |নয়া দিগন্ত

বিগত স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের শাসনামলে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের অভিযোগে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৮ নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বুধবার (৬ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে এই তথ্য জানা যায়।

রেজিস্ট্রার অফিস থেকে জানা যায়, গত ২৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩তম রিজেন্ট বোর্ডে এ সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে ২১ নম্বর আলোচ্যসূচিতে এটি অন্তর্ভুক্ত ছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের সাথে জড়িতদের বিচারের জন্য চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ২৪ মে পর্যন্ত তদন্ত কমিটি শিক্ষার্থীদের থেকে অভিযোগগুলো সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে ২৪ জুলাই তদন্ত কমিটি তদন্ত শেষ করে এর রিপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দেয়।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটির কাছে ৩৫ এর অধিক শিক্ষার্থীদের নামে নয়টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে ছয়টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, দুইটি অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি এবং ১টি অভিযোগ অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত নিজেদের মধ্যে সমযোতা করে নেন।

রিজেন্ট বোর্ডে চার ক্যাটাগরিতে শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেয়া হয়। এগুলো হলো আজীবনের জন্য সনদ বাতিল (১১ জন), ৩ বছরের জন্য সনদ স্থগিত (৭ জন), আজীবন বহিষ্কার (৬ জন), ৩ বছরের জন্য বহিষ্কার (৪ জন)।

আজীবনের জন্য সনদ বাতিলের মধ্যে আছেন, লিংকন হোসেন (বাংলা বিভাগ, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ), মো: নুরুল্লাহ (ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ), মাসুদ রানা সরকার (গণিত বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ), হামিদুর রহমান শামীম (পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ), ইকরামুল ইসলাম (বাংলা বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ), মিনহাজুল ইসলাম প্রান্ত (সমাজকর্ম বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ), রাসেল হোসেন রিয়াদ (বাংলা বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ), বিল্লাল হোসেন (অর্থনীতি বিভাগ, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ), সুরুজ মিয়া আপেল (গণিত বিভাগ, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ), শেহজাদ হাসান (ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ), শিবু দাস (লোক প্রশাসন বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ)

৩ বছরের জন্য সার্টিফিকেট স্থগিতের মধ্যে আছেন, শাহেদ জামিন হিরা (পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ), নাজমুল ইসলাম আবীর (গণিত বিভাগ, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ), সাব্বির হোসেন সবুজ (বাংলা বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ), শেখ রাসেল (লোক প্রশাসন বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ), সোহানুর রহমান সোহান (ইংরেজি বিভাগ, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ), জহরুল ইসলাম পিয়াস (অর্থনীতি বিভাগ, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ), জাহির রায়হান (বাংলা বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ)।

আজীবন বহিষ্কার হয়েছেন- ফরিদুল ইসলাম বাবু (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ), নাইমুর নাহিদ ইমন (ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ), আশিক আরমান শোভন (স্থাপত্য বিভাগ, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ), তৌফিক হাসান হৃদয় (ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ), অয়ন আলমাস (বাংলা বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ), তানশু দাস (ইতিহাস বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ)।

৩ বছরের জন্য বহিষ্কার হয়েছেন- আশরাফুল ইসলাম (গণিত বিভাগ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ), আকাশ ভূঁইয়া (পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ), অনিক পোদ্দার (ইতিহাস বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ), শাহ আলম (ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ)

জানা গেছে, শাস্তিপ্রাপ্ত সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্ম বলেন, ‘যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেই বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে। তদন্ত কমিটি অত্যন্ত পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। যেসব ২৮ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তাদের প্রত্যেককে আত্মপক্ষ সমর্থনের যথেষ্ট সুযোগ দেয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে বারবার নোটিশ পাঠানো হয়েছে তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে। তবে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এখানে কারো প্রতি অবিচার করা হয়নি।’