টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সাশ্রয়ী ও নির্ভরযোগ্য জ্বালানির গুরুত্ব অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), গাজীপুর-এর ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিনার কক্ষে আয়োজিত ‘এক্সপ্লোরিং দ্য ক্যারিয়ার অপারচুনিটি ইন এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে জ্বালানি খাত এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, স্মার্ট গ্রিড, এনার্জি স্টোরেজ, হাইড্রোজেন ইকোনমি, কার্বন-নিউট্রাল প্রযুক্তি- এসব এখন আর ভবিষ্যতের গল্প নয়, বরং আমাদের বর্তমান বাস্তবতা।’
তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের শুধু বইয়ের জ্ঞান নয়, বাস্তব সমস্যার সমাধানে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে তাদেরকে সৃজনশীল গবেষণা এবং এআই, ইন্টারনেট অব থিংসসহ প্রযুক্তি-ভিত্তিক উদ্ভাবনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে পারলে বাংলাদেশ শুধু স্বনির্ভরই হবে না, বরং বিশ্ববাজারেও প্রতিযোগিতা করতে পারবে।’
সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে ইনস্টিটিউট অব এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং (আইইই) এবং ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি)।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আরেফিন কাওসার।
তিনি বলেন, ‘এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং এমন একটি ক্ষেত্র যা একদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরের সাথে যুক্ত, অন্যদিকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, নীতিনির্ধারণ, এনার্জি হারভেস্টিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-ভিত্তিক এনার্জি অপ্টিমাইজেশনসহ নানা ধরনের নতুন প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কিত। আমাদের শিক্ষার্থীদের উচিত এই পরিবর্তনের অংশ হওয়া এবং জ্বালানি খাতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করে যাওয়া।’
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন আইইই-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. এ এন এম মোমিনুল ইসলাম মুকুট। তিনি তার বক্তব্যে জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানি নিরাপত্তা, সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জৈব-জ্বালানি, আধুনিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ইত্যাদির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এনার্জি সেক্টরে ইনোভেশনের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের (বিইপিআরসি) সদস্য (ইনোভেশন) ও অতিরিক্ত সচিব ড. মো: রফিকুল ইসলাম। তিনি জ্বালানি খাতের বৈশ্বিক প্রবণতা, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, কর্মসংস্থানের সুযোগ, নবায়নযোগ্য প্রকল্প, এনার্জি এফিশিয়েন্সি, কার্বন ম্যানেজমেন্ট এবং ক্যারিয়ার সম্ভাবনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।
সেমিনার সঞ্চালনা করেন আইইই-এর প্রভাষক সেজুঁতি জামান। স্বাগত বক্তব্য দেন আইকিউএসি-এর অতিরিক্ত পরিচালক অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম।
ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বাড়ছে। এ খাতে রয়েছে অপার সম্ভাবনা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গবেষকরা এসব বিষয়কে সামনে রেখে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। শিক্ষার্থীদের চিন্তাশক্তি প্রসারিত করা, গবেষণা মনোভাব জাগ্রত করা এবং এনার্জি সেক্টরে ক্যারিয়ার গঠনের জন্য ভবিষ্যতে এ ধরনের আরো আয়োজন করা যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথ গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষা ও গবেষণার উৎকর্ষতায় প্রাণপ্রিয় ডুয়েটকে শীর্ষ অবস্থানে নিয়ে যেতে আমরা কাজ করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই গবেষণার ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব, টেকসই এবং দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক বিষয়গুলোতে আগ্রহী হয়ে প্রাণের এই বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
অনুষ্ঠান শেষে তিনি আইইই ও আইকিউএসি-সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।
সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, পরিচালকসহ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।