জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যাপীঠ—জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। দুই দশক পেরিয়ে অবশেষে জেগে উঠল সেই কবির ছায়া, আধুনিক ছোঁয়ায় ঝলমল করল ভাস্কর্যের মুখ।
যেখানে কবির প্রতিচ্ছবি প্রতিদিন কথা বলে সূর্যোদয়ে, সেখানেই এবার যোগ হলো সৌন্দর্যের নতুন ভাষ্য। শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের—তাদের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দু সেই ভাস্কর্যে যেন আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে, জ্বলজ্বল করে ওঠে কবিতার আলোয়।
বহু বছর ধরে ভাস্কর্যের পাদদেশে জমেছে প্রতিশ্রুতির ধুলো। বিগত প্রশাসনগুলো দিয়েছিল আশ্বাস, হয়নি বাস্তব। কিন্তু এবার—নজরুল জয়ন্তীর আগমুহূর্তেই বর্তমান প্রশাসনের হাতে বদলে গেছে দৃশ্যপট।
লাইটিং, মার্বেল পাথরের টাইলস, কার্পেটিং আর চারপাশের নিখুঁত সৌন্দর্যবর্ধনে নতুন প্রাণ পেয়েছে ভাস্কর্যটি। যেন রাত্রি নামলে কবির চোখ জ্বলে ওঠে নক্ষত্রের মতো, আর দিনভর বাতাসে বাজে বিদ্রোহের সুর।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী নয়ন চন্দ্র বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন এই সৌন্দর্য বর্ধনের কাজের আশ্বাস শুনলেও বাস্তবায়ন দেখি নাই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি যেহেতু জাতীয় কবির নামে তাই কবির নামের এই ভাস্কর্যটির সৌন্দর্যবর্ধন আমাদের প্রাণের দাবি ছিলো। আমরা চলে আসার পরে বর্তমান প্রশাসন এটি সম্পন্ন করেছে দেখে ভালো লেগেছে। প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আলোকিত নজরুল ভাস্কর্যে শিক্ষার্থীদের দাবী পূরণ হয়েছে জানিয়ে কলা অনুষদের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী বলেন, নজরুলের নামে বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে নজরুলকেই প্রাধান্য দেয়া উচিৎ ছিলো সবার আগে। অথচ এটা হতে সময় লাগলো এতোগুলো বছর। এতোগুলো বছর পরেও এটার কাজ শেষ করায় শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত দাবি পূরণ হয়েছে। এটা নিশ্চয়ই প্রশাসনের একটি ইতিবাচক কাজ ও সফলতা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: জাহাঙ্গীর আলম নয়া দিগন্তকে বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম শুধু আমাদের বিদ্রোহের প্রতীক নন, তিনি আমাদের চেতনার বাতিঘর। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে তার একমাত্র ভাস্কর্যটি দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলিত হয়ে ছিলো। আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকা এই ভাস্কর্যটিতে ছোঁয়া লাগেনি কোনো আধুনিকতার। এবার আমরা সেটির সৌন্দর্য বর্ধন ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে শুধু একটিকে নান্দনিকভাবে নবায়ন করিনি; বরং তার প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধাও প্রকাশ করেছি। আশা করি, এই নবরূপে নজরুল আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবিকতা, সাহস ও শিল্পবোধ জাগিয়ে তুলবে। এই উদ্যোগ নজরুলকে আমাদের সবার হৃদয়ের আরও কাছাকাছি নিয়ে আসবে।
নজরুলের বিদ্রোহী চেতনা আর সৃজনশীলতা যেখানে পথ দেখায় প্রজন্মকে, সেই স্থান আজ নতুন আলোয় উদ্ভাসিত—শুধু ইট পাথরে নয়, হৃদয়ে হৃদয়ে। যে ভাস্কর্য ছিল ইতিহাসের নীরব স্বাক্ষর, আজ তা হয়ে উঠেছে গর্বের দীপ্ত উচ্চারণ।