ভিসি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুর আববার। শিক্ষার্থীদের অনশন থেকে সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানালে তারা জানান, ‘আমরা মরবো, তবু ভিসির পদত্যাগ ছাড়া অনশন ছাড়বো না।’
বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকাল পৌনে ১০টায় অনশনস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন তিনি। এরপর সকাল সোয়া ১০টায় শিক্ষা সেখান থেকে বের হয়ে তিনি ফরিদপুরের উদ্দেশে রওয়ানা দেন।
পরে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) দুই সদস্য এবং বাংলাদেশ মাধ্যমিক ও শিক্ষা অধিদফতরের একজন যুগ্ম সচিব গিয়েও তাদেরকে অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। শিক্ষার্থীরা তাদের অনুরোধও উপেক্ষা করেন।
গত সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয় কুয়েট শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন। ২৭ জন শিক্ষার্থী অনশন করলেও আশপাশে অনেকেই তাদের দাবির সমর্থনে শ্লোগান দিচ্ছেন। বুধবার সকালে শিক্ষা উপদেষ্টা এবং ইউজিসির সদস্যদের সামনেই শিক্ষার্থীরা নানারকম শ্লোগান দিতে থাকেন। ‘সারা বাংলা একদিকে, ভিসি কেন আরেকদিকে’, ‘আমার ভাই অনশনে, ভিসি কেন নিজ আসনে’, ‘আমার ভাই মরছে, ভিসি কেন হাসছে’- ইত্যাদি শ্লোগান দিতে থাকেন শত শত শিক্ষার্থী।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের বারান্দায় দড়ি দিয়ে ঘেরাও দিয়ে অনশনস্থলে কাউকে প্রবেশ না করার কথা লিখে দেয়া হয়েছে।
একে একে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়লে মেডিক্যাল টিমের সদস্যরা তাদেরকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। কুয়েট মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসাধীন একজনকে পানি খাওয়ার অনুরোধ জানালেও তার জ্ঞান ফিরলেই শুধু জানতে চান, ভিসি পদত্যাগ করছেন কিনা।
ভিসির পদত্যাগ ছাড়া তারা কিছুই খাবেন না এমন সিদ্ধান্তে এখনো অটল রয়েছেন তারা। এমনকি সকালে শিক্ষা উপদেষ্টা তাদেরকে অন্তত পানি বা জুস খাওয়ার অনুরোধ জানালেও শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘তোমাদের দাবি যৌক্তিক, কিন্তু একটু সময় দাও, আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টির সন্তোষজনক সমাধানের।’
অনশন প্রত্যাহার করে আলোচনার বসার আহ্বান জানান তিনি। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমাদের সময় শেষ, প্রথমে ছিল ছয়দফা, তখন আলোচনার সুযোগ ছিল। কিন্তু প্রশাসন আলোচনার প্রয়োজন মনে করেনি। সবার সাথে আলোচনা করেই আমরা অনশন শুরু করেছি। এখন ভিসির পদত্যাগ ছাড়া আমরা অনশন থেকে সরে দাঁড়াব না।’
এ সময় শিক্ষার্থীরা রক্তাক্ত কুয়েট নামের ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ঘটে যাওয়া ঘটনার সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন। যার একটি কপিও উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করা হয়।
শিক্ষার্থীরা উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি ভিসিকে সরায়ে দেন স্যার, যে ভিসি আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন, বহিষ্কার করেছেন তার অপসারন ছাড়া সরবো না।’
শিক্ষা উপদেষ্টা সকাল সোয়া ১০টায় সেখান থেকে বের হয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙ্গানোর জন্য এসেছিলাম। অনুরোধ করেছি। তারা শোনেনি। ঢাকায় ফিরে যত দ্রুত সম্ভব এর একটি সমাধান করা হবে।’
এদিকে, শিক্ষা উপদেষ্টা কুয়েট ত্যাগ করার পরই অনশনস্থলে গিয়ে একই অনুরোধ করেন ইউজিসির দু’জন সদস্য প্রফেসর তানজিম আহমেদ ও প্রফেসর সাইদুর রহমান খান এবং মাধ্যমিক ও শিক্ষা অধিদফতরের একজন যুগ্ম সচিব। তারাও শিক্ষার্থীদের অনশন থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানালে শিক্ষার্থীরা
তাও প্রত্যাখ্যান করেন। পরে অনশনস্থল থেকে স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন তারা। এরপর কুয়েট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানান গণমাধ্যমকর্মীদের।