জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রেজিস্ট্রার দফতরের প্রধান অধ্যাপক ড. মো: শেখ গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সাংবাদিকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং দায়িত্ব পালনে গাফিলতির একের পর এক অভিযোগ উঠেছে। বারবার এমন আচরণের ফলে তিনি হয়ে উঠেছেন একাধিক সংবাদ শিরোনামের কেন্দ্রবিন্দু।
অভিযোগ রয়েছে, রেজিস্ট্রার অফিসের একটি স্বাক্ষরের জন্য শিক্ষকদের দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। স্কলারশিপের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও তিনি দায়িত্বশীল আচরণ করেন না। একইসাথে সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া, রূঢ় ভাষা প্রয়োগ, এমনকি তাদের বের হয়ে যেতে বলা তার নিয়মিত আচরণে পরিণত হয়েছে।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন বিষয়ক মতামত জানতে গেলে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন দুর্ব্যবহার করেন সাংবাদিক আতিক মেসবাহ লগ্ন ও রাকিবুল ইসলামের সাথে। সাংবাদিকদ্বয় জকসু নির্বাচন কোথায় আটকে আছে জানতে চাইলে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কথা বললে আগ্রহী নই।’ এরপর তাদের বের হয়ে যেতে বলেন।
এ বিষয়ে সাংবাদিক আতিক মেসবাহ লগ্ন বলেন, ‘আমি একজন রিপোর্টার হিসেবে জকসু নিয়ে জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু স্যারের এমন আচরণে আমি ব্যথিত।’
সাংবাদিক রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘রেজিস্ট্রার স্যার বলেন- তিনি জকসুর নীতিমালা কমিটির সদস্য সচিব নন, একজন সাধারণ সদস্য। তিনি কিছু জানেন না। একইসাথে তিনি সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে আগ্রহী না বলে জানান।’
এমন আচরণ রেজিস্ট্রারের ক্ষেত্রে নতুন নয়। এর আগে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষক ইউজিসি’র ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপের স্বাক্ষর নিতে গিয়ে হন হেনস্তার শিকার।
রেজিস্ট্রার ওই শিক্ষককে বলেন, ‘দ্রুত করতে গেলে আরো দেরি হবে। আমি তো এখন লাঞ্চ করবো, এখন চলে যান। আমরা স্বাক্ষর করার জন্য এখানে বসে নেই।’
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক বলেন, ‘ইউজিসি থেকে আমাকে দ্রুত সময়ে ত্রিপক্ষীয় চুক্তিপত্রের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলা হয়। আশা করেছিলাম এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার মহোদয়ের কাছে গেলে তিনি আন্তরিকতার সাথে স্বাক্ষর করে দিবেন। এরপরও কয়েক দফায় সারাদিন ঘুরে যখন উনার স্বাক্ষরের জন্য শেষবার যাই, তখন তিনি আবার জানতে চান কেন গিয়েছি। এরপর লাঞ্চ করবেন বলে কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে তার এমন ব্যবহারে আমি হতবাক ও মর্মাহত।’
সাইকেল চুরির ঘটনায় অভিযোগ দিতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হন শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি ইভান তাহসীব।
তখন রেজিস্ট্রার বলেন, ‘বের হয়ে যাও! কর্মকর্তাদের ডেকে বলেন ওরে বের করে দাও! বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন পড়তে এসেছ, এলাকার কলেজে পড়লেই তো পারতে।’
একইভাবে, সাংবাদিক তানজিম মাহমুদ অবন্তিকার আত্মহত্যা তদন্ত বিষয়ে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার তাকে বলেন, ‘কালবেলা বা সকালবেলা যেই হও পরে আসো। এখন বের হয়ে যাও।’
সাংবাদিকরা অভিযোগ করেন, ফোন করলে রেজিস্ট্রার নিজে না ধরে তার পিএস বা সহকারী রেজিস্ট্রার ফোন ধরেন। তারা যা জানার তা লিখিতভাবে দিতে বলেন। এতে করে প্রশাসনের জবাবদিহিতা ও তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলেও মত দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার সাংবাদিকরা ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ড. রেজাউল করিমের কাছে মৌখিক অভিযোগ করলেও প্রশাসন বরাবরই থেকেছে নিরব। তবে সম্প্রতি একাধিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি ভিসির কাছে লিখিত স্মারকলিপি প্রদান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায়।
এ বিষয়ে ভিসি অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘ঘটনাগুলো আমার নজরে এসেছে। আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। তোমরা তা দৃশ্যমান দেখতে পাবে। ইনশাআল্লাহ ভালো কিছু হবে।’
অন্যদিকে, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো: শেখ গিয়াস উদ্দিনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার পিএস এনামুল হক বলেন, ‘রেজিস্ট্রার স্যার ব্যস্ত আছেন। আপনি পরে ফোন দিয়েন।’
এমনকি রেজিস্ট্রার দফতরে গিয়ে দেখা করতে চাইলেও তার পিএস জানান, ‘স্যার অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত আছেন। যা জানার লিখিত দিয়ে যান।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন দায়িত্বশীল পদে থেকে বারবার অশোভন আচরণ এবং অসৌজন্যমূলক ব্যবহার প্রশ্ন তুলছে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতার ওপর।