জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে এসেছে ইসলামী ছাত্রীসংস্থা, জাবি শাখা। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহায়তায় তথ্যসেবা কেন্দ্র চালুর মধ্য দিয়ে সংগঠনটি ক্যাম্পাসে নিজেদের কার্যক্রমের আত্মপ্রকাশ ঘটায়।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে ‘হেল্পডেস্ক ও তথ্যকেন্দ্র’ ব্যানারে সংগঠনটিকে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিভিন্ন ধরনের সেবা দিতে দেখা যায়। জাবিতে এর আগে কখনো নিজস্ব ব্যানারে প্রকাশ্য কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি সংগঠনটিকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই সংগঠনটির পক্ষ থেকে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা, স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ, ব্যাগ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী রাখার ব্যবস্থা, নারীদের নামাজ আদায়ের স্থান এবং বিশ্রামের সুবিধা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ইসলামী বই বিক্রি, সংগঠনের পরিচিতি লিফলেট বিতরণ এবং সমর্থক ফরম পূরণ কার্যক্রমও চলতে দেখা যায়।
সংগঠনটির জাবি শাখার সভানেত্রী ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘ভর্তিচ্ছু নারী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের যেকোনো প্রয়োজনীয় সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। তাদের জন্য বসার জায়গা, নামাজের ব্যবস্থা, পানির ব্যবস্থা, পরীক্ষার হলে পৌঁছে দেয়া, আবাসনের তথ্য এবং প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।’
সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আগে জাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য সংগঠনগুলোর প্রকাশ্যে কাজ করার সুযোগ খুব সীমিত ছিল। ৫ আগস্টের পর আমরা ধীরে ধীরে কাজ শুরু করি। মেয়েদের সংগঠন হওয়ায় বিষয়গুলো গোছাতে কিছুটা সময় লেগেছে। এখন আমরা একটি সংগঠিত পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের এখনো পূর্ণাঙ্গ কোনো কমিটি নেই। আমি আপাতত সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। ২০২৬ সেশনের শুরুতে আমাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে তথ্যকেন্দ্রে ১০-১৫ জন এবং বাইরে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছাতে ২০-২৫ জন সদস্য কাজ করছেন।’
আত্মপ্রকাশের আগে সংগঠনটির কোনো কর্মসূচি ছিল কি-না এ বিষয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমরা একেবারেই নিষ্ক্রিয় ছিলাম এমন নয়। যেসব সামাজিক বা মানবিক কার্যক্রম আমাদের আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক নয়, সেসব কার্যক্রমে আমরা অংশ নিয়েছি। ভবিষ্যতেও আমাদের আদর্শবিরোধী কোনো কার্যক্রমে অংশ নেব না। ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথে আদর্শগত মিল থাকলেও সাংগঠনিক কোনো সম্পর্ক নেই।’
ইসলামী ছাত্রীসংস্থার তথ্যসেবা কেন্দ্রে সেবা নিতে আসা নারী শিক্ষার্থী ফাতিমা আক্তার বলেন, ‘আজকে ও আগামকাল দু’ দিন আমার পরীক্ষা আছে। আমি ও আমার বাবা সকালেই এসেছি কিন্তু কালকের পরীক্ষা দেয়ার জন্য আমার রাতে আবাসনের ব্যবস্থা করতে না পেরে অনেক দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু তখন একজন আমাকে ছাত্রীসংস্থার তথ্যকেন্দ্রে আসার কথা বলেন। আমি এখানে এসে ছাত্রীসংস্থার আপুদের সাথে কথা বললে তারা তাৎক্ষনিক থাকার ব্যবস্থা করে দেন।’
এদিকে ইসলামী ছাত্রীসংস্থা সম্পর্কে আগে অবগত ছিলেন না বলে জানান জাবি শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহিবুর রহমান মুহিব।
তিনি বলেন, ‘আজকে সাংবাদিকরা যেভাবে প্রথম তাদের দেখেছেন, আমরাও সেভাবেই প্রথম দেখেছি। আমরা আশা করি, তারা সামনের দিনে ইসলামি মূল্যবোধের ভিত্তিতে ছাত্রী সমাজের কল্যাণে কাজ করবে এবং ক্যাম্পাসের যৌক্তিক আন্দোলনগুলোতেও শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবে। ছাত্রীসংস্থার সাথে শিবিরের কোনো সাংগঠনিক বা কর্মপদ্ধতিগত মিল নেই। তবে আদর্শিক দিক থেকে কিছু ক্ষেত্রে মিল থাকতে পারে।’



