জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় এক সাংবাদিকের সাথে দুর্ব্যবহার ও থাপড়ানোর হুমকি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স কক্ষে আয়োজন চলাকালীন সময়ে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের সম্মাননা স্মারক প্রদানের ছবি ও ভিডিও চিত্র ধারণের জন্য সামনে গিয়ে একসাথে দাঁড়ান বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা। এ সময় পেছন থেকে তাদের সরতে বলেন শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম। পরে কয়েকজন সরে গেলেও সময়ের আলোর প্রতিনিধি আশরাফুল আলম তার পেশাগত কাজে চিত্র ধারণ করার কথা জানান তাকে। এ সময় আশরাফুলকে বেয়াদব বলে সম্বোধন করে থাপড়ানোর হুমকি দেন তিনি। এসময় কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, সিন্ডিকেট সদস্য সহ অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ঘটনায় সাংবাদিককে মারার হুমকির বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এনটিভির প্রতিনিধি রোহান চিশতীকে মারতে উদ্যত হন ওই ছাত্রদল নেতা। এ সময় তিনি বলেন, ‘তুই কি আরো বুঝতে চাইতেছোস? হেয় ঘটনা বুঝতে চাইতাছে’। পরে তাকে সরিয়ে নেন ছাত্রদলের অন্য নেতা-কর্মীরা।
এ বিষয়ে সময়ের আলোর প্রতিনিধি আশরাফুল আলম বলেন, ‘ছবি তোলার সময় উচ্চস্বরে আমাকে সরে দাঁড়াতে বললে আমি সাংবাদিক পরিচয় জানিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনের কথা বলি। এরপর তিনি আরো উত্তেজিত হয়ে বলে তুই বেয়াদবি করতেছোস, তোরে এখন থাপড়াবো। তারপর শিক্ষকরা এসে আমাদের সরিয়ে নেন।’
ঘটনার বিষয়ে এনটিভির বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রোহান চিশতী বলেন, ‘পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দিয়ে সময়ের আলোর প্রতিনিধিকে মারার হুমকি দেয়ায় অনুষ্ঠান শেষে তার কাছে ঘটনার কারণ জানতে চাই। এ সময় তিনি বলেন আমি আমার ছোট ভাইকে থাপড়ানোর কথা বলছি। পরে আমি ঘটনা জানতে চাইলে তিনি আমাকে মারতে উদ্যত হয়। একইসাথে তিনি আমাকে ‘সাঙ্ঘাতিক’ বলে সম্বোধন করেন।’
এর আগেও অনুষ্ঠানে একাধিক সাংবাদিকের সাথে উগ্র আচরণ করেন ছাত্রদলের এ নেতা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার বার্তার প্রতিনিধি মো: মুমিন ইসলাম সবুজ বলেন, ‘রেজিস্ট্রার স্যারের বক্তব্য চলাকালীন সময়ে আমি ভিডিও নেয়ার জন্য তার সামনে দাঁড়ালে তিনি আমাকে কর্কশ স্বরে বলেন ‘সরো ওদিকে’। এরপর আরেকজনের সামনে দাঁড়ালে তিনিও ঠিক একই ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে জানতে পারি আমাদের একজন সহকর্মীকেও তিনি বিভিন্নভাবে হুমকি দেন।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাহিদুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতক ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক পরিচয়ের সুবিধা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো প্রবেশ করেন তিনি। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বিশেষ বিবেচনায় ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন তিনি।
তার ছাত্রত্বের বিষয়ে জানতে চাইলে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন বখতিয়ার উদ্দিন বলেন, ‘অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে বিশেষ বিবেচনায় তাকে ছাত্রত্ব দেয়া হয়েছে।’
এদিকে একাধিক সূত্র মতে, বর্তমানে তিনি শাখা ছাত্রদলের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক সভাপতি পদপ্রার্থী ইমরান আহমেদ ফরাজির অনুসারী।
সাংবাদিকদের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের বিষয়টি স্বীকার করেছেন শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমরান হোসেন প্রধান। তিনি বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম। তিনি যেই আচরণ করেছেন এটা কখনোই কাম্য নয়। আমরা আমাদের সাংগঠনিক জায়গা থেকে ব্যবস্থা নেব, পরবর্তীতে সময়ে যেন এমন ঘটনা না ঘটে। আমরা আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করব।’
এদিকে ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির।