অবন্তিকার আত্মহত্যা, মৃত্যুর ৫৫ মিনিট পর ফেসবুক পোস্ট নিয়ে রহস্য

ফরেনসিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, অবন্তিকা ও আম্মানের মধ্যে মেসেজ আদান-প্রদান হয়েছিল, তবে দ্বীন ইসলামের সাথে কোনো যোগাযোগ পাওয়া যায়নি। মৃত্যুর পর পোস্টটি কারা করেছে— সে বিষয়ে কোনো বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ মেলেনি।

নুর আলম, জবি সংবাদদাতা

Location :

Dhaka City
অবন্তিকার আত্মহত্যা, মৃত্যুর ৫৫ মিনিট পর ফেসবুক পোস্ট নিয়ে রহস্য
অবন্তিকার আত্মহত্যা, মৃত্যুর ৫৫ মিনিট পর ফেসবুক পোস্ট নিয়ে রহস্য |নয়া দিগন্ত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা আত্মহত্যা করার মাত্র ৫৫ মিনিট পর তার ফেসবুক আইডি থেকে রহস্যজনক একটি পোস্ট দেয়া হয়— যেখানে মৃত্যুর জন্য সহপাঠী রায়হান সিদ্দিকী আম্মানকে দায়ী করা হয় এবং সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের নামও উল্লেখ থাকে। অথচ সুরতহাল অনুযায়ী, অবন্তিকা মৃত্যুর সময় কক্ষে একাই ছিলেন এবং মোবাইল ফোন ঘটনাস্থলেই পাওয়া যায়। কে বা কারা ওই পোস্ট করেছিল, ১৭ মাসের তদন্তেও পুলিশ তা উদঘাটন করতে পারেনি।

পুলিশ তদন্তে উঠে এসেছে— ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ রোজার দিনে ইফতারের পর অবন্তিকা নিজ কক্ষে দরজা বন্ধ করে দেন। রাত আনুমানিক ৯টার দিকে তার মা ও ভাই জারিফ জাওয়াদ অপূর্ব তাকে ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। সুরতহাল প্রতিবেদনে এটি নিশ্চিত হয়েছে। কিন্তু একইদিন রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট হয়— ‘আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই, মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী। আর তার সাথে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সাপোর্ট করা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম।’

ঘটনার পরদিন ১৬ মার্চ অবন্তিকার মা তাহমিনা বেগম মামলা করেন। এতে আম্মানকে প্রধান আসামি ও দ্বীন ইসলামকে দ্বিতীয় আসামি করা হয়। দুজনকেই গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। প্রায় আট মাস জেল খাটার পর জামিনে মুক্ত হন দ্বীন ইসলাম। ১৭ মাসের দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত রোববার আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে আম্মানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হলেও দ্বীন ইসলামকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

ফরেনসিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, অবন্তিকা ও আম্মানের মধ্যে মেসেজ আদান-প্রদান হয়েছিল, তবে দ্বীন ইসলামের সাথে কোনো যোগাযোগ পাওয়া যায়নি। মৃত্যুর পর পোস্টটি কারা করেছে— সে বিষয়ে কোনো বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ মেলেনি।

পুলিশি প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর অবন্তিকা আইন বিভাগের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তৎকালীন প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামালকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেটি আমলে নেননি বা কোনো ব্যবস্থা নেননি। তার বক্তব্য অনুযায়ী, অবন্তিকার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব না হওয়ায় অভিযোগ নিয়ে অগ্রসর হননি।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘটনার পর দ্বীন ইসলামকে সাময়িক বহিষ্কার করে। দীর্ঘ ১৭ মাস ধরে ক্লাস ও পরীক্ষার বাইরে থাকা এই শিক্ষক বলেন, ‘আমি অবন্তিকার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। আমি নির্দোষ হয়েও সামাজিকভাবে অপদস্ত হয়েছি। শিক্ষক হয়ে শিক্ষার্থী থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা কষ্টের। অবন্তিকার মৃত্যুর পর কে তার ফেসবুকে পোস্ট করলো, তা এখনো রহস্য। একই সাথে সাবেক প্রক্টর কেন অভিযোগ আমলে নিলেন না, তারও বিচার চাই।’

জবি ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘পুলিশি প্রতিবেদন জমা হয়েছে শুনেছি। আইনগতভাবে দ্বীন ইসলামের যোগদানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

১৭ মাস পেরিয়ে গেলেও মৃত্যুর পর ফেসবুকে দেয়া পোস্টের রহস্য এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে— যা পুরো ঘটনাকে ঘিরে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।