পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা হলের (ছাত্র হল-১) প্রভোস্ট ড. শাহজান আলী এবং পাবিপ্রবি নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পাবিপ্রবি স্বাধীনতা হল কর্মকর্তা ওলিউল্যার পদত্যাগের দাবিতে মধ্য রাতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন হলের শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (২ আগস্ট) রাত ১টার দিকে এ বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় মিছিলটি স্বাধীনতা হল থেকে শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় গিয়ে শেষ হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ আগস্ট রাতে ফিস্টের আয়োজন করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শনিবার (২ আগস্ট) ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইসিই) বিভাগের ছাত্র মুনতাসির মামুন হল অফিসে ফিস্টের টিকিট কিনতে গেলে হলের কর্মকর্তা ওলিউল্যা মুনতাসির মামুনের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। এ ঘটনায় রাতে হল প্রভোস্ট ড. শাহজান আলীকে জানানো হলে হল প্রভোস্ট ওলিউল্যার পক্ষ নিয়ে মুনতাসির মামুনের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন এবং বলেন, ‘তোমার হলে থাকার কোনো অধিকার নাই।’
এ ঘটনাটি রাত ১১টার দিকে ঘটে। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে মুনতাসির মামুন ফেসবুকে জানালে শিক্ষার্থীরা হল প্রভোস্ট এবং ওলিউল্যার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেন। এরপর তারা রাত ১টার দিকে দু’জনের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ওলিউল্যা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অথচ পাঁচ তারিখের পরও সে হলে নির্বিঘ্নে অফিস করে যাচ্ছেন। গত কয়েকদিন ফিস্টের টিকিট বিক্রি নিয়ে তিনি কয়েকজন ছাত্রের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন। অথচ হল কোনো কিছু যাচাই-বাছাই না করে ওলি উল্যার পক্ষ নিয়েছেন।
ভোক্তভোগী ছাত্র মুনতাসির মামুন বলেন, ‘গত ৩০ জুলাই আমি হল ফিস্টের টিকিট কিনতে হল অফিসে যাই। তখন দেখি যিনি টিকিট বিক্রি করেন (ওলিউল্যা) তিনি হল অফিসে নাই। তখন হল অফিসের শাকিল ভাইয়ের পরামর্শে আমি আমার তথ্য একটা কাগজে লিখে চলে আসি। শনিবার আমি টিকিট নিতে যাই কিন্তু যে কাগজে আমার তথ্য লিখে আসছি আগের দিন সেটা খুঁজে পাইনি। পরে গণরুমের তালিকায় আমার নাম খুঁজে পাই।
তারপর ওলি ভাইকে টিকিটের কথা বললে তিনি বলেন, ‘টিকিট দেয়া যাবেনা, স্যারের নিষেধ আছে।’ তখন আমি হল প্রভোস্টকে ফোন দিলে তিনি বলেন, ‘তুমি যদি হলের বৈধ ছাত্র হও তাহলে টিকিট পাবা।’ দুপুরে আমি আবার হল অফিসে গেলে ওলি ভাই বললেন, ‘স্যার এখনো সিদ্ধান্ত জানায়নি, এখন দিতে পারবো না।’
এরপর আবার বিকেলে অফিসে গেলাম এবং ওলি ভাই সেই একই কথা বললেন। এরপর আমি আবার স্যারকে ফোন দিয়ে সারাদিন ধরে টিকিট কেনার জন্য আমার ভোগান্তির কথা জানাই। স্যার আমার কথা শুনে ওলি ভাইকে ফোন দেন। ওলি ভাই আমার সামনে আমার নামে স্যারকে মিথ্যা বলা শুরু করেন। তখন ওলি ভাই স্যারকে বলেন, ‘ছাত্ররা জোর করে তার থেকে টিকিট নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোনো ছাত্র তার থেকে জোর করে টোকেন নেয়নি, তবু স্যারকে আবার বলেন, অনেকেই তার থেকে জুলাই যোদ্ধা বলে টিকিট নিয়ে গেছেন। কথা শেষে আমি হলের কার্ড দেখিয়ে হল অফিস থেকে টিকিট নিয়ে আসি।
রাত ৯টার দিকে প্রভোস্ট স্যার আমাকে ফোন দিয়ে বলেন আমি টিকিট পেয়েছি কিনা। তখন আমি হ্যাঁ বললে স্যার আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি হলের বৈধ বাসিন্দা কিনা। আমি হ্যাঁ উত্তর দিলে স্যার বললে তুমি আমার সাথে অফিসে দেখা করো।’
এরপর আমি হল অফিসের বাইরে স্যারের সাথে দেখা করলে স্যার আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার বাড়ি কোথায়? ‘আমি বলি, পাবনায়। তখন স্যার আমাকে বলেন, ‘তুমি হলে থাকো কেন? তোমার তো হলে থাকার অধিকার নাই। তখন আমি জিজ্ঞেস করি, কেন? স্যার উত্তর দেয়, ‘তুমি হল অফিসের লোকের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছো।’ আমি বললাম আমি কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করিনি কিন্তু স্যার আমার শোনেনি। ততক্ষণে অনেক লোক জড়ো হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আমি অন্যায় না করেও হল প্রভোস্ট স্যার উনার অফিসের এক কর্মকর্তার জন্য আমাকে অপমান করেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। দু’ব্যক্তিরই পদত্যাগ দাবি করছি।’