নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ড. মীর সালমা আক্তার অনুমতিবিহীন প্রায় তিন বছর শিক্ষা ছুটিতে থেকেও স্বপদে বহাল তবিয়তে আছেন কোনো জরিমানা বা শাস্তি ছাড়াই। যা পতিত প্রশাসনের নীতি বহির্ভূত কার্যকলাপ হিসেবে বিবেচিত।
২০১৪ সালের ১৬ মার্চ নোবিপ্রবির অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ড. মীর সালমা আক্তার প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি শিক্ষা ছুটির জন্য আবেদন করলে ১২ এপ্রিল ২০১৬ থেকে ১১ এপ্রিল ২০২০ সাল পর্যন্ত ছুটি মওকুফ করা হয়। নিয়ম অনুসারে এ শিক্ষা ছুটি তিনি স্ববেতনে ভোগ করবেন। কিন্তু উক্ত শিক্ষা ছুটি শেষ হলেও তিনি অতিরিক্ত প্রায় আট মাস শিক্ষা ছুটি বর্ধিত করেন, এ ছুটি তিনি বিনা বেতনে ভোগ করেন।
পরবর্তীতে আবার তিনি ১ জানুয়ারি ২০২১ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ দীর্ঘ এক বছর ৮ মাস ১২ দিন তিনি অনুমতিবিহীন অনুপস্থিত ছিলেন।
ফ্যাকাল্টির সূত্রে জানা গেছে, এ বিষয়টি তখন ডিন’স কমিটিতে উপস্থাপিত হলে ডিন’স কমিটি তাকে তিরস্কার করেন এবং অনুমতিবিহীন ছুটিগুলো বিনা বেতনে শিক্ষা ছুটির সুপারিশ করেন। এছাড়াও তাকে উক্ত কমিটি থেকে ভবিষ্যতে এ জাতীয় ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয় তার জন্য সতর্ক করা হয়। কিন্তু এ ঘটনার পরেও তিনি আবারো একই ঘটনার সূত্রপাত করেন।
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ বিবেচনায় তাকে ১৫ দিনের ছুটি প্রদান করা হয়। ছুটি শেষে তার যোগদানের কথা থাকলেও তিনি ২৫ নভেম্বর ২০২২ থেকে ১১ মে ২০২৪ পর্যন্ত দীর্ঘ এক বছর পাঁচ মাস ১৭ দিন অনুমতিবিহীন ছুটি ভোগ করেন। বিষয়টি রিজেন্ট বোর্ডে উপস্থাপিত হয়। সেখানে তার অনুমতিবিহীন অনুপস্থিতিকে রিজেন্ট বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে বিনা বেতনে ছুটি প্রদান করা হয়।
তিনি সর্বমোট বিনা বেতনে ছুটি ভোগ করেন ৩ বছর ১১ মাস ২ দিন এবং সর্বমোট ৭ বছর ১১ মাস ২ দিন ছুটি ভোগ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ছুটির ১২ দশমিক ৪ নম্বর নীতিমালাতে বলা হয়, একজন শিক্ষক সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের বেশি পিএইচডি শিক্ষা ছুটিতে থাকতে পারবেন না।
১২ দশমিক ১৫ নম্বর নীতিমালাতে বলা হয়, শিক্ষা ছুটিতে থাকা শিক্ষকের পড়াশোনা, প্রশিক্ষণ, গবেষণা শেষ হওয়ার অবিলম্বে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরত আসতে হবে। অন্যথায়, শিক্ষা ছুটিতে তার উপর খরচ করা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অর্থ তাকে ফেরত দিতে হবে।
অন্য আরেকটি নীতিমালা ১২ দশমিক ১৬ নীতিমালাতে বলা হয়, যদি শিক্ষা ছুটিতে থাকা শিক্ষকতার পড়াশোনা অচল মান রাখে বা শেষ না করতে পারে তাহলে শিক্ষা ছুটিতে তার উপর খরচ করা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ তাকে ফেরত দিতে হবে।
১২ দশমিক ২০ নীতিমালাতে বলা হয়, শিক্ষা ছুটি থেকে আসা শিক্ষককে অবশ্যই সাত দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রার বরাবর রিপোর্ট করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক সূত্র থেকে জানা গেছে, একই সময়ে কিছু সংখ্যক শিক্ষককে অননুমোদিত ছুটিতে থাকায় অব্যাহতি দেয়া হয়। কিন্তু অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ড. মীর সালমা আক্তারকে শুধু তিরস্কার এবং বিনা বেতনে ছুটি প্রদান করা হয়।
বিভাগীয় সূত্র থেকে জানা যায়, উক্ত প্রভাষকের স্বামী একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো: রুহুল আমীন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের ২০২৩-২৪ কার্যকরী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং একই সেশনে নোবিপ্রবির রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য ছিলেন। ধারণা করা হয়, উক্ত প্রভাষকের স্বামীর ক্ষমতা বলে তিনি এ কাজ করেছেন।
এ ব্যাপারে জানার জন্য উক্ত প্রভাষক ড. মীর সালমা আক্তারকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল ধরেননি।
তৎকালীন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং বর্তমান কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হানিফ বলেন, ‘এটাতো অনেক আগের কথা, এটা এখন স্পষ্ট মনে পরছে না। তবে লাস্ট রিজেন্ট বোর্ডে এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটা নিয়ে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে এবং উভয়পক্ষেরই মতামত নেয়া হয়েছে। তবে এরপরেও এটা নিয়ে যদি রিভিউয়ের সুযোগ থাকে, তাহলে পরবর্তী রিজেন্ট বোর্ডে এটা নিয়ে রিভিউ করতে পারবে।’
এ ব্যাপারে নোবিপ্রবি ভিসি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তৎকালীন প্রশাসন তাকে বিনা অনুমোদনে যে ছুটি দিয়েছে সেটা নৈতিক হোক বা অনৈতিক হোক সেটা তারা রিজেন্ট বোর্ডের মাধ্যমে অনুমোদন করে নিয়েছে সেখানে আমার বলার কিছু নেই। তবে সেটা অনৈতিক আমি এটুকুই বলবো।
তিনি বলেন, রিসেন্টলি তিনি এসিট্যান্ট প্রফেসরের জন্য আবেদন করেছেন। তিনি ২০১৪ সালে লেকচারার হিসেবে জয়েন করেন, সে হিসেবে ডিউলেটার অনুযায়ী, তার ২০১৬ সালে এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হওয়ার কথা। কিন্তু যেহেতু সে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিনা অনুমোদনে দু’বার ছুটি নিয়েছেন। তার সেই বিনা অনুমোদনে ছুটি নেয়ায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী শাস্তিস্বরূপ তাকে ২০১৬ সাল থেকে এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে বিবেচনা করা হবে না। গত ১৭ তারিখে যে রিজেন্ট বোর্ড হয়েছে সেই রিজেন্ট বোর্ডে তাকে এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে প্রমোশন দেয়া হয়েছে এবং সেইসাথে তাকে এই নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে যেহেতু সে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দু’বার বিনা অনুমোদনে ছুটি কাটিয়েছে যা আগের রিজেন্ট বোর্ড মওকুফ করেছে কিন্তু ভবিষ্যতে যদি এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে তাহলে তাকে দায়িত্ব থেকে বিনা নোটিশে বহিষ্কার করা হবে। এসিস্ট্যান্ট প্রফেসরের নিয়োগপত্রের নীতিমালায় তাকে এই কন্ডিশন লিখিতভাবে দেয়া হয়েছে।