ডাকসু নির্বাচন

মব তৈরি করে ছাত্রদলকে বাধা দেয়া হচ্ছে : রিজভী

জনগণ এই প্রত্যাশা করে যারা ঋণ খেলাপি, যারা রাষ্ট্রের টাকা, জনগণের টাকা যারা লুট করে পাচার করেছে, তছরুপ করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।

অনলাইন প্রতিবেদক
রুহুল কবির রিজভী
রুহুল কবির রিজভী |নয়া দিগন্ত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে অভিযোগ তুলে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ডাকসু নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম যাতে ছাত্রদল কিনতে না পারে। সেখানে মব তৈরি করে বাধা দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা এত ত্যাগ, এত রক্ত ঝরানোর মধ্য দিয়ে যে বাংলাদেশ চেয়েছি , সেই বাংলাদেশ আমাদের অর্জন করতে হবে। এখনো মানুষের মাঝে মব সংস্কৃতি বিস্তার লাভ করেছে। ডাকসু নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম যাতে ছাত্রদল কিনতে না পারে, সেখানে মব তৈরি করে বাধা দেয়া হচ্ছে। আজকে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এই পরিস্থিতি কেন হবে? মহল্লায় মহল্লায় কেন হবে, গ্রামে গ্রামে, জেলায় জেলায়, আজকে আইনবহির্ভূত কার্যক্রম চলছে, সেখানে বিশৃঙ্খল জনতা কেন নিজের হাতে আইন তুলে নেবে। কারণ আজকে আইন প্রয়োগ ঠিক মতো হচ্ছে না। এই কারণেই বেআইনি কর্মকাণ্ড হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের জীবনও বিপন্ন হয়েছে। আমরা এটা কামনা করতে পারি না।

এ সময় তিনি রংপুরের দু’জন সংখ্যালঘু মব সংস্কৃতির শিকার হয়েছেন বলে জানান।

আজ মঙ্গলবার বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন এবং দোয়া শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন রিজভী। বিএনপির অঙ্গ সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। পুষ্প অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদনে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী এবং সাধারণ সম্পাদক আহসান রাজীবসহ বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃবৃন্দ অংশ নেয়।

রিজভী বলেন, বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দল। জাতীয়তাবাদের আদর্শ প্রীতি বিশ্বাস করে সমস্ত মানুষদের, সমস্ত তরুণদের নিয়ে দলের মানবিক ও কল্যাণমূলক কাজ জনগণের মধ্যে নিয়ে যাবে এবং জনগণের পাশে থাকবে। বিএনপি সৃষ্টি হয়েছে মানুষের সেবার জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য, দুস্থ মানুষের পাশে। রাজনীতি মানেই হচ্ছে মানব কল্যাণ। রাজনীতি মানেই হচ্ছে দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াও। গত ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে স্বেচ্ছাসেবক দলের যারা জীবন দিয়েছেন, প্রত্যেকেরই আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন তিনি।

বিএনপি’র এই মুখপাত্র বলেন, ‘হাসিনার আমলে ব্যাংকগুলো যারা ঋণ খেলাপি হয়েছে, সেই খেলাপি সাড়ে তিন লক্ষ হাজার কোটি টাকা রি-শিডিউল করে তাদের আবার নবায়ন করেছিল। এবার অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও প্রায় দেড় লাখ হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাপি নবায়ন করেছে।’

তিনি বলেন, জনগণ এই প্রত্যাশা করে যারা ঋণ খেলাপি, যারা রাষ্ট্রের টাকা, জনগণের টাকা যারা লুট করে পাচার করেছে, তছরুপ করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।

অভিযোগ তুলে রিজভী বলেন, আজকে বাংলাদেশ ব্যাংক, আজকে আর্থিক যে সমস্ত মনিটরিং পর্যবেক্ষণ সংগঠন আছে, তারা আজকে কি ভূমিকা রাখছে, তারা কি কাজ করছে? আজকে একের পর এক ব্যাংক রুগ্ন হয়ে গেছে। মহিউদ্দিন খান আলমগীরের মতো দুর্বৃত্ত মানুষ ফার্মাস ব্যাংক করে, পদ্মা ব্যাংক করে জনগণের টাকা লুট করেছে, সেই সমস্ত ব্যাংক মালিকদের গ্রেফতার করুন। আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি করেন তিনি।

রিজভী বলেন, আর্থিক সঙ্কটের কারণে গার্মেন্ট বন্ধ হচ্ছে, এই খাতে কাজ করা লোকগুলো যাবে কোথায়? এই লোকগুলো যাওয়ার জায়গা নেই, সুতরাং গার্মেন্টস বন্ধ হবে না, যদি লুটপাট ও অপরাধীদের গ্রেফতার করা যায়।

নির্বাচন প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে রিজভী বলেন, দেখি তারা (সরকার) কী করে, তারা তো ঘোষণা করেছে একটা নির্বাচনী রোডম্যাপ দেবে। দেখি তারা কী রোডম্যাপ দেয়। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত হয়ে যে ভোট কেন্দ্রগুলো করা হয়েছে। সেই ভোট কেন্দ্রগুলো বাতিল করে, নতুন করে ভোটের জনগণের বিন্যাস দেখে করতে হবে। কারণ ফ্যাসিবাদের আমলের ভোট কেন্দ্রগুলোতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণ করতে নির্বাচন হয়েছে।

গত নির্বাচনের চিত্র তুলে ধরে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, একটা হয়েছে ভোটার শূন্য, একটা হয়েছে মধ্যরাতের নির্বাচন। তখনই মানুষ এই সমস্ত নির্বাচন ভুলবে যদি এই নির্বাচন কমিশন এবং অন্তর্বর্তী সরকার আবার সুষ্ঠ নির্বাচন ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেয়। জনগণ ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর দাবিগুলো পূরণে পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই মনে করি, ভোটারদের মধ্যে আস্থা আসবে এবং ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যাবে। প্রায় ১৭ বছর পর তারা নির্বিঘ্নে ও নিরাপত্তার সাথে ভোট কেন্দ্রে যাবে। সেই নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করতে হবে সরকারকে।