জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হতে গিয়ে জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
আটক ব্যক্তিরা হলেন পাভেল, সিয়াম ও আফিক। এর মধ্যে পাভেল ও সিয়াম প্রক্সি পরীক্ষায় অংশ নেন, আর আফিক এই চক্রের মাধ্যমে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
পাভেল ঢাকার বিক্রমপুর এলাকার এবং সিয়াম ময়মনসিংহ নগরের বাসিন্দা। তারা একাধিক ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দেয়ার সাথে যুক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে।
ত্রিশালের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে আফিক ৭ আগস্ট চূড়ান্ত ভর্তি পরীক্ষার দিন সন্দেহজনক আচরণ করলে শিক্ষকরা তার স্বাক্ষর যাচাই করেন। কিছু প্রশ্নে ব্যর্থ হলে তদন্তে ধরা পড়ে প্রক্সি চক্রের যোগসূত্র। পরে আফিকের সাথে থাকা পাভেলকে আটক করা হয়।
পাভেলের ফোনে পাওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, বিসিএস, ব্যাংকসহ সরকারি চাকরির পরীক্ষায়ও এই চক্র প্রক্সি দিত। উদ্ধার হওয়া তথ্যের মধ্যে ছিল পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড, প্রার্থীদের ছবি এবং একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সংযোগ, যেখানে কয়েকজন বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা রয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের প্রধান ড. মো: সুজন আলী জানান, ‘ফোনের লক খুলতে ৪-৫ ঘণ্টা চেষ্টা করেও সফল হয়নি। তবে ভেতরে থাকা তথ্য আরো বড় চক্রের তথ্য উন্মোচন করতে পারে। আফিক ও পাভেলের মধ্যে এক লাখ টাকার চুক্তি ছিল, যাতে আফিককে ভর্তি করানোর শর্ত ছিল। চুক্তি অনুযায়ী, ৭ আগস্ট আফিকের বাবা টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল।
এই চক্রের মাধ্যমে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত আরো দু’শিক্ষার্থী প্রক্সি দেয়ার চেষ্টা করেছে বলে জানা গেছে, যার একজন টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পাভেল ও সিয়াম এর আগেও একাধিক পরীক্ষা ও ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছেন। চক্রের মূল হোতা হিসেবে বাবু ভাই নামের এক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যিনি গাজীপুরের টঙ্গীর বাসিন্দা। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি নিজেকে চক্রের পরিচালক হিসেবে দাবি করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যেই মামলা করে আটকদের পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে।
জানা গেছে, গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সব প্রক্সি পরীক্ষা জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রেই সম্পন্ন হয়েছে।
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ঘটনাটি জামালপুরে ঘটেছে, কিন্তু এখানে সবার স্বতঃস্ফূর্ত চেষ্টায় ধরা পড়েছে। আমরা তদন্ত কমিটি প্রস্তাব করেছি। আগামী রোববার তা ঘোষণা করা হবে। প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে পুরো চক্রের সন্ধান বের করা হবে। আশা করছি, তদন্তের মাধ্যমে সবকিছু উঠে আসবে। আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’