বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) কম্বাইন্ড ডিগ্রি (বিএসসি ইন ভেট সায়েন্স অ্যান্ড অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি) চালুর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো: বাহানুর রহমান বলেছেন, ‘দেশের প্রেক্ষাপটে প্রাণিসম্পদের উন্নয়নের জন্য এই ডিগ্রি অপরিহার্য।’ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ এবং জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষকরা।
ডিন বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রাণিসম্পদ খাতে কম্বাইন্ড ডিগ্রির বিষয়ে স্পষ্ট চাহিদা রয়েছে। আমরা দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কোনো মতামত দিইনি, ব্যক্তিগত স্বার্থেও নয়। এতে করে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়ও আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা এগিয়ে যেতে পারবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রতি বছর ভেটেরিনারিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯৮ শতাংশ দেশীয় এবং ২ শতাংশ বিদেশী। এত বিপুল সংখ্যক দেশীয় গ্র্যাজুয়েটের চাকরির বাজার নিশ্চিত করাই আমাদের প্রথম দায়িত্ব। মালয়েশিয়ান শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন সংক্রান্ত তথ্য যাচাই চলছে। এ বিষয়ে মাননীয় ভিসির সাথে আলোচনা হয়েছে এবং শিগগিরই একটি প্রতিনিধি দল মালয়েশিয়া গিয়ে তাদের ভেটেরিনারি কাউন্সিলের সাথে বৈঠক করবে।’
সংবাদ সম্মেলনে সাবেক ডিন ও প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: মকবুল হোসেন বলেন, ‘১৯৬৩ সালে বাকৃবিতে ভেটেরিনারি শিক্ষায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়। সে সময় কম্বাইন্ড ডিগ্রিকে ভেঙে আলাদা করে ডিভিএম এবং বিএসসি ইন অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি করা হয়। প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তান পর্যালোচনার পর আগের অবস্থায় ফিরে গেলেও বাংলাদেশে তা আর সম্ভব হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘১৯৮০-এর দশক থেকে সরকার বিষয়টি উপলব্ধি করে একাধিক কমিটি গঠন করে- এনাম কমিটি, শামসুল হক বারি কমিটি ও এরশাদুল হক কমিটি। এসব কমিটি বারবারই কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালুর সুপারিশ করেছে। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতায় তা বাস্তবায়ন হয়নি।’
মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: মাহবুব আলম বলেন, ‘১৯৬১ সাল থেকে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি গ্র্যাজুয়েটদের পক্ষ থেকেই কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবি উঠেছে। শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারছে এর যৌক্তিকতা ও গুরুত্ব, তাই তারা আন্দোলন করছে।’
ফিজিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইলিয়াছুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘কোনো দেশের কাউন্সিল ডিগ্রিকে রেজিস্ট্রেশন দেয়ার সময় নাম নয়, বরং পাঠ্যক্রমের সময় ও বিষয়বস্তু বিবেচনা করে। বর্তমানে আমাদের ডিভিএম ডিগ্রিতে নানা ঘাটতি রয়েছে। ফলে বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল ভবিষ্যতে এ ডিগ্রিকে স্বীকৃতি নাও দিতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালুর পর প্রাণিসম্পদের উন্নতি হয়েছে। তাহলে বাকৃবিতে চালু হলে ক্ষতি কেন হবে?’
উল্লেখ্য, কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালুর দাবিতে গত ২৭ জুলাই থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা। ৩০ জুলাই থেকে অনুষদটি তালাবদ্ধ রয়েছে। একই দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরাও। গত ২৫ আগস্ট থেকে তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে অনুষদে তালা দিয়েছেন।